নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ব্যবসায়ী, গুমের অভিযোগ ছেলের
২২ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় এলাকার লোকজনের সঙ্গে শঙ্খ নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরত আসেননি আমজু মিয়া নামে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী। যাদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তাদের জিজ্ঞাসা করেও বাবার সন্ধান পাননি ছেলে। বারবার থানায় ধর্ণা দিয়েও নিখোঁজ বাবাকে উদ্ধারে পুলিশকে পাশে পাননি তিনি। একমাস ধরে বাবার খোঁজ না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন সন্তান।
ছেলে আলমগীর হোসেনের ধারণা, তার বাবা যাদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তারা তাকে খুন করে লাশ গুম করেছে অথবা তাকে অজ্ঞাতস্থানে জিম্মি করে রেখেছে। মাছ ধরার সঙ্গীদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে এলাকায় আধিপত্য নিয়ে তাদের বিরোধ ছিল বলেও অভিযোগ আলমগীরের।
ধান ও বাঁশ ব্যবসায় যুক্ত আমজু মিয়ার বাড়ি শঙ্খ নদীর তীরে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চাপাছড়ি গ্রামে।
তাকে অপহরণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের সবার বাড়িও একই ইউনিয়নে। এরা হলেন- নুরুল আমিন (৫৬), আবুল কালাম (৪৮), আবু ইউসুফ (৪২), মোস্তাক আহম্মদ (৪০), আরিফুল হক (৩৩) ও মুজিবুল হক খোকা (৪৭)।
আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমজু মিয়াকে মোবাইলে কল করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য শঙ্খ নদীর লেঝঘাটা এলাকায় নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখান থেকে নৌকায় করে তারা শঙ্খেরকূল এলাকায় পৌঁছাতে দেখেন স্থানীয়রা। কিন্তু এরপর আমজু মিয়া আর ফিরে আসেননি। এ ঘটনায় আলমগীর থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ নিখোঁজ ডায়েরি রের্কড করে।
আলমগীর বলেন, ‘যারা মাছ ধরতে গিয়েছিলেন, তারা সবাই ফেরত এসেছেন বিকেলে। আমি তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি আমার বাবা কোথায়? উনারা কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। এরপর থেকে আমি ১৫-২০ বার থানায় গেছি। কিন্তু আমার মামলা থানা নেয়নি। জিডি করে আমাকে ফেরত দিয়েছি। একমাস ধরে আমার বাবাকে পাচ্ছি না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কেউ সন্ধান দিতে পারছেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেশব চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে মিসিং ডায়েরি নিয়েছিলাম। নুরুল আমিনকে আমরা আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি জানিয়েছিলেন, আমজু মিয়াসহ তারা তিনজন নৌকায় করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। নৌকায় বসে তিনজন চোলাই মদ খেয়েছেন। দুজন কোনোভাবে ফিরে আসতে পারলেও আরেকজনের খবর তারা জানেন না। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েও তল্লাশি করেছি। কিন্তু আমজু মিয়াকে পাওয়া যায়নি।’
আলমগীরের আইনজীবী জহির উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। অপহরণের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৬৪ ও ৩৪ ধারায় দায়ের করা মামলাটি গ্রহণ করে আদালত চন্দনাইশ থানাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দিয়েছেন।
আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের গ্রাম আর আমাদের গ্রাম পাশাপাশি। মূল সড়কে যেতে তাদের গ্রাম পার হয়ে আমাদের যেতে হয়। এলাকায় তারা খুব প্রভাব রাখে। বিভিন্নভাবে আমাদের এলাকার লোকজনকে হয়রানি করে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। তবে আমার বাবার সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের প্রভাবে আমার বাবাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’