‘বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক ২ দেশের জন্যই লাভজনক’
২২ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:৪০
ঢাকা: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারকগুলোকে দুই দেশের জন্যই লাভজনক। এসব সমঝোতা স্মারক নিয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা মূলত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখতে চায়।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের আয়োজনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ‘বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক’ শিরোনামে এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের স্বর্ণ অধ্যায় চলছে এখন। একটি মহল এখনো এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছে। যারা এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছেন, তারা কোনোকিছুই সোজা চোখে দেখেন না। বাংলাদেশে এখন গুজব আর অপপ্রচার চলছে। এসব গুজব ও অপ্রপ্রচারের জবাব দিতে হবে তথ্য দিয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহবুবের মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গোলটেবিলে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, একটি মহল স্বাধীনতার পর জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে, দেশের স্বার্থ বিলিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে বলে জিকির তুলে আসছে। কিন্তু তারা বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোন চুক্তিই বাতিল করেনি।
তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখছে। পাকিস্তানের চশমা দিয়ে দেখলে দেশ লাভবান হয়েছে, অর্থনৈতিক সুবিধা বেড়েছে— এসব চোখে পড়বে না।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিরোধী মহলের কাছে ভারত বিরোধিতা তুরুপের তাস। তারাই ক্ষমতায় থাকলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। সুতরাং তাদের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, চুক্তির ক্ষেত্রে আমরা দেখব দেশ কতটুকু লাভবান হয়েছে। সংবিধানের প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। চুক্তি কিন্তু সরকারের একার বিষয় নয়, রাষ্ট্রের বিষয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে যেসব সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, তা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শান্তির সম্পর্ক থাকার কারণে উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়ে, তাদের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র এনে ভারতের কাছে মাফ চেয়েছে। তারা যেকোনো সমস্যাকে আরও বড় সমস্যায় পরিণত করে।
আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেবেন না। তিনি জান থাকতে মান দেবেন না।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তর সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে এখনো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে, এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পেতেই পারেন। বিএনপি বলছে বঙ্গোপসাগারে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে ভারত চীনের ওপর নজরদারি করবে। কিন্তু এ রাডারের মালিকানা বাংলাদেশের, যা দিয়ে আমরা সমুদ্রসীমায় কঠোর নজরদারি রাখতে পারব।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও আলোচনা করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ আরাফাত, গণমাধ্যমকর্মী ও গবেষক সুভাষ সিংহ রায়, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদারসহ অন্যরা।