Sunday 15 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নুসরাত হত্যা মামলায় অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা চায় পরিবার


২৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:০৫ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৫১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেনী থেকে: ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর এই রায়ের তারিখ ঠিক করেন নারী ও শিশু নির্যাতন নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ। নুসরাত পরিবারের এই মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা  চান।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার মা শিরীন আখতারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

নুসরাতের মা  বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তার কারণে মামলাটি খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বিচার বিভাগের কাছে আমার অনুরোধ, অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হোক। আমার মেয়ে রাফি মাংস নিয়ে কবরে যেতে পারেনি। আমার মেয়ে পানি পানি বলে চিৎকার করেছে, পানি খেতে পারেনি। প্রতিদিন এসব ভাবি আর ছটফট করি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনলে অন্য কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি হবে না।

বিজ্ঞাপন

বাড়ির পাশেই নুসরাতের কবর। সেই কবরের পাশে লাগানো ফুল গাছে ফুল ফুটে আছে।  নুসরাতের আত্মায় শান্তি কামনায় বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া ফুলগুলোও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

নুসরাতের প্রতিবেশী রাহাত বলেন, দেশে বড় বড় হত্যাকাণ্ডসহ নানাবিধ অপরাধ ঘটলেও সেগুলোর বেশিরভাগের বিচারে বছরের পর বছর সময় লাগে। কিন্তু ব্যতিক্রম নুসরাত হত্যা মামলা। বাংলাদেশের সব অপরাধের মামলা এমন তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে যাবে।

মামলার বাদী আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার সাড়ে ৬ মাসের মাথায় রায়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। গত ১০ জুন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার পর মাত্র ৬১ কার্যদিবসে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন  আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।

এদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। ২৪ অক্টোবর রায়ে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবে। নুসরাত মৃত্যুর আগে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, সে চিঠি পুলিশ জব্দ করেছে। এছাড়া মেডিকেল রিপোর্টে ডাক্তাররা এটিকে হত্যা বলেনি।

ফেনী জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এরকম সকল মামলায় অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় এনে সাজার মুখোমুখি করলে অপরাধের মাত্রা কমে যাবে। মামলার কার্যক্রম দীর্ঘ দিন পড়ে থাকলে অন্য অপরাধীরা অপরাধ করতে সুযোগ পায়।

এদিকে, রায়কে কেন্দ্র করে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরনবী। তিনি বলেন, শুধু আদালত পাড়া নয়।  নুসরাতের বাড়িতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। শহরে কাউকে জড়ো হতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ বিশৃঙখলা করতে চায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

নুসরাত হত্যা মামলায় চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন— সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রায় ৮০৮ পৃষ্ঠার নথিটি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।

মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় গত ৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত রাফি। ঘটনার পর ৮ এপ্রিল আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত চার জনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই। নুসরাতের মৃত্যুর পর হত্যাচেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

শুরুতে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে তা  পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের ৫০ দিনের মাথায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পিবিআই। এতে উল্লেখ করা হয়, কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন পাঁচ জন। জেল থেকে হত্যার নির্দেশ দেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। আর অর্থ জোগনদাতা হিসেবে উঠে আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের নাম।

এর আগে, দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় সোনাগাজির ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইউসুফ ও এসআই ইকবালকে। প্রত্যাহার করা হয় ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমকে। গেল ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুরু হয় যুক্তিতর্ক।

২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানকে জেরার মধ্যে দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে। ৩০ সেপ্টেম্বর নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

নুসরাত নুসরাত হত্যা মামলার রায়

বিজ্ঞাপন

বাবা: সকল ফলের বৃক্ষ
১৫ জুন ২০২৫ ১৪:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর