নুসরাতের তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ চিরকালের অনুপ্রেরণা: আদালত
২৪ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৪৫
ঢাকা: ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুকে নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ বলে উল্লেখ করে আদালত বলেন, এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। তার এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ আলোচিত এ মামলার রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দেন।
আদালত তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপীঠ। দুই হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী সেখানে অধ্যায়নরত। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার আলোকজ্জল ভুমিকায় কালিমা লিপ্তকারী এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। তার এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা।
এই রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, আসামিদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জিত করবে নিশ্চয়। তাই দৃষ্টান্তমূলক কঠোরতম শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য। এছাড়া এ ঘটনায় সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম তার পেশাগত তার দায়িত্ব পালনে গাফলতি করেছেন বলেও আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন। এসময় আদালত তাকে তিরস্কার করেন।
রায়ে আরও বলা হয়, এরই প্রেক্ষিতে বিচার্য বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক, আসামিদেরকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অত্র মামলার ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফিকে বিগত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টা ৪৫ থেকে ৯টা ৫০ মিনিট মধ্যে ফেনীস্থ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার সাইক্লোন সেল্টারের ৩য় তলার ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। এসময় নুসরাতের ওড়না দিয়ে তার হাত-পা বেধেঁ তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত/০৩) এর ৪ (১)/৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেক আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দণ্ডে দন্ডিত করা হয়।
এদিকে অতি অল্প সময়ে এ রায় ঘোষণাকে মাইল ফলক উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের বাবা।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই ফেনী জেলা ও আদালতের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আইন শৃংখলা বাহিনী। সকাল ১১টার দিকে সব আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালত রায় ঘোষনা করেন।
এই রায়ে দণ্ড পাওয়া ১৬ আসামিরা হলেন— সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
আরও পড়ুন:
নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ রাষ্ট্রপক্ষের
নুসরাত হত্যা মামলা: একনজরে ঘটনাপ্রবাহ
নুসরাত হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল?