কাতার থেকে ‘শিবির-যুবলীগ’ মিলেমিশে চাঁদাবাজি
২৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:১২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে চাঁদা দাবির অভিযোগে নিজেদের যুবলীগ কর্মী পরিচয় দেওয়া পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নগরীতে চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কাতারে অবস্থান করা দুই দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সরওয়ার ও ম্যাক্সন এবং যুবলীগ ক্যাডার একরামের মধ্যে ঐক্য হয়েছে। তাদের নামে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি, আকবর শাহ, অক্সিজেন, মুরাদপুরসহ আশপাশের এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি।
গ্রেফতার পাঁচজন সরওয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নামে চাঁদাবাজি করে। চাঁদার ভাগ যায় কাতারে। মাঝে মাঝে তারা দুবাইয়ে অন্তরীণ দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামেও চাঁদাবাজি করে বলেও জানায় পুলিশ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীর দুজন ব্যবসায়ীকে চাঁদার দাবিতে হয়রানি করেছে গ্রেফতার পাঁচজন। একজনের বাড়িতে পেট্রোল বোমাও নিক্ষেপ করে তারা। এই তথ্য পাবার পর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওয়াজেদিয়া এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করা হয়।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমরা সরওয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। তারা কাতারে বসে সন্ত্রাসীদের দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চাঁদাবাজি করাচ্ছে। তিনজনের নির্দেশে চাঁদাবাজিতে জড়িত পাঁচ যুবককে আমরা গ্রেফতার করেছি।’
গ্রেফতার পাঁচজন হলো- রুহুল আমিন (২১), মো. তুহিন (২৮), সুজন (২৯) জাবেদ ওরফে ভাগিনা জাবেদ (৩১) ও রনি (২০)।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার সারাবাংলাকে জানান, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যায় সরোয়ার ও ম্যাক্সন। গত বছর (২০১৮) নগরীর পতেঙ্গার নেভাল এলাকায় তাসফিয়া আমিন নামে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একরামকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছিল। এরপর একরামও পালিয়ে কাতারে চলে যায়।
প্রিটন আরও জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর নগরীর মুরাদপুরের এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে গ্রেফতার হওয়া যুবকরা। এসময় তারা ওই ব্যবসায়ীকে সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নির্দেশের কথা জানায়। কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াহাটে তার বাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে ওই ব্যবসায়ী থানায় কোনো অভিযোগ সেসময় করেননি। পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর তিনি থানায় গিয়ে মামলা করেছেন।
পরিদর্শক প্রিটন বলেন, ‘সম্প্রতি উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামে টাকা দাবির মৌখিক অভিযোগ পাই। বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা জানতে পারে সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম কাতারে অবস্থান করে গ্রেফতার রুহুল আমিনের মাধ্যমে উজ্জ্বলের কাছ থেকে টাকা চেয়েছে।’
‘রুহুল আমিনের খোঁজ পেয়ে আমরা তাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করি। গ্রেফতার চাঁদাবাজরা চাঁদা চাইতে গিয়ে অনেকসময় কাতারে সরওয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানিয়ে আপসে অনেকের টাকা দেওয়ার তথ্যও আমাদের কাছে আছে’, বলেন প্রিটন সরকার।
সূত্রমতে, গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে ভাগিনা জাবেদ হচ্ছে সরওয়ার-ম্যাক্সন ও একরামের মূল অনুসারী। সরওয়ার-ম্যাক্সনের অনুসারী একসময়ের শিবির ক্যাডাররা এখন একরামের অনুসারী হিসেবে ভাগিনা জাবেদের সঙ্গে আছে।