Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ধর্মে-ধর্মে সংঘাত এড়াতে প্রয়োজন মহাত্মা গান্ধীর জীবনদর্শন’


২৫ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৫১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ধর্ম নিয়ে মানুষে-মানুষে সংঘাতে এড়াতে মহাত্মা গান্ধীর জীবনদর্শন চর্চা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুদিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।

মহাত্মা গান্ধী সার্ধশত জয়ন্তী উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘গান্ধীজীর জীবনই ছিল তার জীবনদর্শন। মানবজাতির জন্য তিনি অবতারের মতো আর্বিভূত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে আইনস্টাইনের মতো মনীষী শোক প্রকাশ করেছিলেন। সারা পৃথিবী শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি শুধু ভারতের জাতির পিতা নন, তিনি এই উপমহাদেশের, সমগ্র এশিয়ার নিপীড়িত মানুষের নেতা। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতার আন্দোলনে গান্ধীজীর ভূমিকা অবিস্মরণীয়।’

তিনি বলেন, ‘এই পূর্ববঙ্গে গান্ধীজীর অনেক স্মৃতি। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, বরিশাল অঞ্চলে তিনি ২৩০ দিনের মতো কাটিয়েছিলেন। নোয়াখালীতে তিনি যখন এসেছিলেন, সেখানকার মুসলমানরা ভেবেছিলেন গান্ধীজী বোধহয় হিন্দুদের পক্ষে কথা বলতে এসেছেন। কিন্তু স্টেশনে নেমেই গান্ধীজী বললেন, আমি কারও পক্ষে কথা বলতে আসিনি, আমি এসেছি শান্তির পক্ষে কথা বলতে। এমন শান্তিবাদী মানবতাবাদী নেতা বিশ্বে বিরল।’

আবুল মকসুদ বলেন, ‘আজ সারাবিশ্বে দেশে-দেশে, ধর্মে-ধর্মে, জাতিতে-জাতিতে, মানুষে-মানুষে যে সংঘাত, হানাহানি-রক্তপাত, সেটা বন্ধ করতে হলে গান্ধীজীর জীবনদর্শনের চর্চা খুবই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিনা রক্তপাত, কেউ পরাজিত হবে না, সবাই বিজয়ী হবে- এমন চর্চা খুবই প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

একই অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, ‘মানুষে-মানুষে সংঘাতের কারণে বিশ্বে আজ সাড়ে ৪ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। তারা এখন শরণার্থী হয়ে বেঁচে আছে। গান্ধীর জীবনদর্শনে আমরা দেখি, তিনি অহিংসার কথা বলেছেন। অহিংস অসহযোগের কথা বলেছেন।’

‘আমাদের দেশে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও গান্ধীর নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান যখন গণপরিষদ বসবে না বলে ঘোষণা দিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তখনো এবং এখনো গান্ধীজীর নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বিশেষত মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যারা করছেন তাদের অনেকে গান্ধীর পথকে বেছে নিয়েছেন। গান্ধীর জীবনদর্শন ভবিষ্যতেও মানুষকে মু্ক্তির পথ দেখাবে।’

মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশত জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সভাপতি কবি আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রসৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, কোলকাতার যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমিত দে ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

ফুলকি ও সোনার তরীর শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ও মানবতার গান। রক্তকরবীর পরিবেশনায় মহাত্মা গান্ধীকে নিবেদিত গীতিনৃত্যালেখ্য হয়েছে। এছাড়া আবৃত্তিতে অংশ নেয় প্রমা আবৃত্তি সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে দুটি সেমিনার। বিকেল ৪টায় ‘বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ, অসহিঞ্চুতার প্রেক্ষাপটে অহিংস অসহযোগের দর্শন’ বিষয়ে সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ আবুল মকসুদ। বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপকম ওমপ্রকাশ মিশ্র, গোলাম মুস্তাফা, অমিত দে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

বিকেল ৫টায় একইস্থানে ‘উগ্র জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থান ও মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশচেতনা’ বিষয়ে আরও একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, অমিত দে ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত।

সন্ধ্যা ৬টায় থাকছে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী।

অনুপম সেন আবুল মকসুদ ধর্ম সংঘাত

বিজ্ঞাপন

পদ প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৫২

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর