সফলতা পেতে সর্বসাধারণের পরামর্শ চায় দুদক
২৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৪০
ঢাকা: দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বহুমুখী ও বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর কমিশনের এই কার্যক্রম নিয়ে কেউ কেউ মতামতও প্রকাশ করছেন। এসব মতামতকে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের মতামতকে কমিশনের কর্মপ্রক্রিয়ায় সংযোজনও করছে। এর ধারাবাহিকতায় এবার দুদকের কার্যক্রমকে আরও প্রসারিত ও কার্যকর করতে সর্বসাধারণের পরামর্শ গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।
দুদক বলছে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে তারা নিজেদের কার্যক্রম প্রসারিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে জনগণের সমন্বিত অংশগ্রহণ ছাড়া দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন টেকসই করা কঠিন বলেও মনে করে সংস্থাটি। এ প্রেক্ষাপটেই এ মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিশন সভায় দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমন বিষয়ে কমিশনের বর্তমান কার্যক্রমের (ম্যান্ডেট) বাইরে আরও কী কী কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে, তা নির্ধারণ করতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সর্বসাধারণের মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিশনের তফসিলভুক্ত অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত, প্রসিকিউশন, হটলাইন-১০৬, গণশুনানি, সততা স্টোর, সততা সংঘ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির চলমান কার্যক্রমের বাইরে আরও কী কী কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে, এসব বিষয়ে সর্বসাধারণের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে। দেশের যেকোনো নাগরিক আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে ডাকযোগে ‘চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা’ বরাবর অথবা কমিশনের নিজস্ব হটলাইন-১০৬ অথবা কমিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইনবক্সে মতামত/পরামর্শ দিতে পারবেন (পরামর্শ আলাদা কাগজে দেওয়া যেতে পারে)।
দুদক জানিয়েছে, বর্তমানে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গণসচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভা, সেমিনার, গণশুনানিসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গঠিত সততা সংঘের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে হয়রানিমুক্ত সরকারি পরিসেবা দিতে দেশব্যাপী স্থানীয় সরকারি কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা নাগরিকদের নিয়ে প্রায় ১৩০টি গণশুনানিও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া হটলাইন-১০৬-এর মাধ্যমেও অভিযোগ গ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি সংঘটিত হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করে চলেছে দুদক।
দুদক নিজ উদ্যোগে অথবা অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক আইনের তফসিলভুক্ত অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত ও প্রসিকিউশন কার্যক্রম পরিচালনা করে। কমিশন বিধি অনুযায়ী, ঘুষ, অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের মতো অপরাধ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে আদালত। পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ মিললে মামলা দায়ের ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল এবং প্রসিকিউটরদের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করে থাকে।
এছাড়াও অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে সার্চ, সিজ ও অ্যারেস্ট করার ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় এসব ক্ষমতার প্রয়োগও করা হয়। অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে আরও কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, সে বিষয়েই সর্বসাধারণের পরামর্শ চায় দুদক। কমিশন তাদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত সারাবাংলাকে বলেন, আমরা দুদকের কার্ক্রমকে আরও বেশি বিকশিত, গতিশীল ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সব নাগরিকের মতামত চাই। কিভাবে আমরা কাজের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও বেশি সফলতা পেতে পারি, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ কারণেই আমরা দেশের সব নাগরিক ও বিশিষ্টজনদের মতামত চেয়েছি।
দুদকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা দুদককে সাধুবাদ জানাই। দুদক আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে। তবে দেশের সব নাগরিকের কাছে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের মতামত চাওয়া নিঃসন্দেহে সুফল বয়ে আনবে। আমরা অবশ্যই দুদকের সঙ্গে আছি। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো পরামর্শ থাকলে আমরা সেটাও কমিশনকে দিয়ে সহায়তা করব। সবাই এগিয়ে এলে দুর্নীতি প্রতিরোধ অবশ্যই সম্ভব।