মাধ্যমিকে এমপিও-বঞ্চিত জয়পুরহাটের ৩ উপজেলা
২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৩০
জয়পুরহাট: সমতার ভিত্তিতে দেশব্যাপী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হলেও জয়পুরহাটের তিনটি উপজেলায় মাধ্যমিক স্তরের একটি প্রতিষ্ঠানও ওই তালিকায় স্থান পায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব শর্ত পূরণের পরও সংশোধিত নীতিমালার ২২ ধারাতেও এমপিওভুক্ত হয়নি কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার পাঁচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটিও।
গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এমপিওভুক্ত নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিম্ন মাধ্যমিক (ষষ্ঠ-অষ্টম), মাধ্যমিক (ষষ্ঠ-দশম) ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (একাদশ-দ্বাদশ) এবং ডিগ্রি কলেজ, মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল), কারিগরি (কৃষি, ভোকেশনাল ও এইচএসসি বিএম) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট ২৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থান হয়েছে এই তালিকায়। এর মধ্যে সারাদেশে ৯৯৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়েছে।
তালিকা প্রকাশের পর জয়পুরহাটের এই তিন উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, নীতিমালা মানা হলে এই তিন উপজেলার কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন পেত তালিকায়। ফের তদন্তের মাধ্যমে কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় যুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। তা না করা হলে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও জানান তারা।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলাতে মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এগুলো হলো— কালাই পৌরশহরে অবস্থিত আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কালাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মোলামগাড়ীহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ক্ষেতলাল উপজেলার পুলঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও আক্কেলপুর উপজেলার আমবাড়ী কালঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলো দীর্ঘ ১৯/২০ বছর ধরে নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান সব শর্ত পূরণ করেই তারা আবেদন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকা প্রকাশের আগে বিদ্যালয়গুলোতে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এমপিও সংশোধনী নীতিমালার ২২ ধারা অনুযায়ী এর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারত।
এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করেই আবেদন করেছেন— এমন দাবি জানিয়ে কালাইয়ের আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মস্তফা খান সারাবাংলাকে বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী আমার বিদ্যালয় সব শর্ত পূরণ করে। এ বিদ্যালয়টি ২০০১ সালে নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে বছরই মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। একাডেমিক স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থী সংখ্যা, পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফলাফল— সবকিছু বিবেচনায় এমপিওভুক্তির শতভাগ শর্ত পূরণ করে এই বিদ্যালয়। তারপরও আমাদের এই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি, এটা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না।
গোলাম মস্তফা খানের দাবি, এমপিওভুক্তির যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মনগড়া এবং কোনো নীতিমালা না মেনেই তা তৈরি হয়েছে।
কালাইয়ের মোলামগাড়ীহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, তালিকা প্রকাশের আগে ভেবেছিলাম সারাদেশে যদি ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হয়, সেই তালিকায় আমাদের স্কুলের নাম থাকবে। কিন্তু প্রকাশের পর দেখলাম আমাদের স্কুলের নামই নেই। এমপিওভুক্তির তালিকায় নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ তারও।
এদিকে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন তালিকার দাবি জানিয়ে গোলাম মস্তফা আরও বলেন, তদন্তসাপেক্ষে নতুন করে এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি। তা না হলে এমপিওভুক্তির জন্য যে আবেদন করেছিলাম, সেই কপির আলোকে হাইকোর্টে গিয়ে রিট আবেদন করা হবে।
কলাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরের পাঁচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্তির যোগ্যতার কথা স্বীকার করছে জেলা শিক্ষা অফিসও। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলুল্লা বলেন, আমার জানামতে এ তিন উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের পাঁচটি বিদ্যালয়ই এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য। এ জন্য সব শর্তই তারা পূরণ করে। সে অনুযায়ী তদন্ত রিপোর্টও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও নীতিমালা সংশোধনীর ২২ ধারা অনুযায়ী তিন উপজেলার অন্তত তিনটি বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হতে পারত বলে মনে করি।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, জয়পুরহাট-২ সংসদীয় আসনটি এই তিন উপজেলা মিলে গঠিত। আমার জানামতে, এই তিন উপজেলার পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই এমপিওভুক্তির উপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে স্কুলগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের সব জেলা ও উপজেলাতে সমতার ভিত্তিতেই এমপিওভুক্তির এই তালিকা প্রকাশ করা হলে তিন উপজেলার কোনো প্রতিষ্ঠানই কেন এই তালিকায় স্থান পেল না, তা রহস্যজনক। বিষয়টি আমাদের সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।