Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ বছরেও সচল হয়নি অর্ধ কোটি টাকার এক্সরে মেশিন


২৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:০০

বগুড়া: সরবরাহের ২ বছর পার হলেও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন কাজে আসছে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টল না করে দেওয়ায় সেটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। তবে এ বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরেজ ডিপো (সিএমএসডি) ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির।

বিজ্ঞাপন

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের পক্ষ বারবার যোগাযোগ করলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু করার ক্ষেত্রে (ইনস্টল) কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে অর্ধ কোটি টাকার এই এক্সরে মেশিনটি হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে পড়ে আছে।

বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের চাহিদা অনুযায়ী সিএমএসডি’র মাধ্যমে ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক্সরে মেশিন (৫০০এমএ) সরবরাহ করে। পরে সেটি বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের রেডিওলেজি’র টেকনিশিয়ান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাতের বেলায় মেশিনটি ট্রাকযোগে হাসপাতালে দিয়ে তারা চলে যায়। পরে ২০১৭ সালের আগস্টে এর ডিজিটাল ইউনিট কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি (সিআর) ইউনিটটি সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিন পরে থাকার পরেও এটি ইনস্টল করে দেওয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, বারবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া সিএমএসডিসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রথম পর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাসপাতালে সিআর মেশিনটি ইনস্টলের চেষ্টা করে। ওই সময় তারা মৌখিক ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়, সফটওয়্যারের সমস্যা রয়েছে। পরে তারা লিখিত ভাবে জানায়, অটোমেটিক ভোলটেজ রেগুলেটার না থাকার কারণে সি আর মেশিনটি (এক্সরে ইউনিটের ডিজিটাল অংশ) চালু না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক্সরে মেশিনের ডিজিটাল ইউনিট সরবরাহের প্রায় দেড় বছর পর চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিষয়টি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সিআর ইউনিট চালু না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবাহকৃত এক্সরে মেশিনের (৫০০এমএ) এনালগ অংশ দিয়ে পুরাতন পদ্ধতিতে (এক্সরে ফ্লিম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ডেভলপ) এক্সরে কার্যক্রম চালু রাখে। তবে এক্সরে করার পর ফ্লিম প্রিন্ট করার জন্য কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি বা সিআর ইউনিটটি দীর্ঘ সময় পরিত্যক্তের মতো পড়ে রয়েছে। এর প্রিন্টার, সিআর ইউনিটসহ ক্যাসেট ও ফ্লিম কার্যকর রয়েছে, না অচল হয়ে গেছে সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে পারেছেন না।

একাধিক সূত্র জানায় অত্যাধুনিক এই ডিজিটাল এক্সরে ইউনিটের মূল্য অর্ধ কোটি টাকার মতো হতে পারে। তবে এর প্রকৃত মূল্য কত বা এটি কেন ইনস্টল করা হয়নি, সে বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কিছু বলতে রাজি হননি।

ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে এসেছিলেন, তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘এক্সরে মেশিনটি আমরা ইনস্টল করে দিয়েছি এবং তা চালু রয়েছে।’ তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যখন বলা হয়, সিআর ইউনিট তো ইনস্টল হয়নি বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তখন তিনি আর কোনো মন্তব্য না করে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি তাদের ইনস্টল করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এটি চালু দেখে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ঠ বোর্ড প্রত্যায়ন দেবে। কিন্তু এরকম কোনো প্রত্যায়ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। প্রথমে এটির সফটওয়ার সমস্যার কথা বলা হলেও পরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিন্ন মন্তব্য করেছে।

সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে এক্সরে করতে রোগীদের যেখানে ব্যয় হয় মাত্র ২০০ টাকা সেখানে বাইরে থেকে এক্সরে করতে রোগীদের ব্যয় হচ্ছে ৮০০ টাকা। যে কারণে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসার খরচও বাড়ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে বর্তমানে এনালগ পদ্ধতির এক্সরে করা হচ্ছে। প্রয়োজনের কারণে অনেক রোগীকে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্সরে করে হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেখাতে হচ্ছে। এনালগ পদ্ধতির কারণে বর্তমানে ৫০/৬০টি এক্সরে হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ টি এম নুরুজ্জামান চঞ্চল জানান, ডিজিটাল এক্সরে চালু থাকলে হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ২ শতাধিক এক্সরে হতো। সাধারণ রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে ইউনিট দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন।

এক্সরে মেশিন মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর