‘পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোয় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আলালের মৃত্যু’
২৬ অক্টোবর ২০১৯ ২১:৩০
বগুড়া: পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে শিশু আলালের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মবিন উল ইসলাম।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে আলালের ময়নাতদন্ত শেষে তিনি এ কথা জানান। ডা. মবিন উল ইসলাম বলেন, আলালের বৃহদন্ত্রে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এছাড়া তার নাক, কান ও মুখমণ্ডলে এর প্রভাব পড়ে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণেই অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে শিশু আলালের মৃত্যু হয়।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকায় আফরিন জুট মিলে কাজ করতো আলাল (১২)। শুক্রবার পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আলালের বাবা মোজাহার ফকির বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিন ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নামাজে জানাজা শেষে দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার ঢাকন্তা গ্রামে আলালের দাফন সম্পন্ন হয়।
তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি পুলিশ। সূত্র জানায়, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে কয়েক মাস আগে আলাল ওই মিলে কাজ শুরু করে। তার মা দোলেনা বেগম, নানি আছমা ও খালা রেশমা একই মিলে কাজ করেন।
রেশমা জানান, অভাবের কারণে আলালের বাবা-মা সুদে টাকা ঋণ নেন। সেই টাকা শোধ করতে এ বছর আলালের স্কুল বন্ধ করে মিলে শ্রমিকের কাজ নিয়ে দেন। আলাল স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো। কারখানায় কাজ করে আলাল যে টাকা পেত তা মায়ের হাতে তুলে দিত।
সূত্র জানায়, আফরিন জুট মিলে কোনো সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হতো না। আইন অমান্য করে ২০ থেকে ৩০ জন শিশুকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে মিল মালিক মো. খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। কারখানার জিএম রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রেশমা আরও জানান, শুক্রবার সকালে আলাল ও তার মা একই ব্লকে কাজ করছিলেন। আলাল হাওয়া মেশিনের (কমপ্রেসর) পাইপ দিয়ে ক্লিনিংয়ের কাজ করছিল। হঠাৎ তারা দেখতে পান আলালকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে আলালের মৃত্যু হয়।
কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কারখানার দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যতন কর্মকার (১৭) এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসাবে হাওয়া মেশিনের পাইপ জব্দ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু শ্রমিককে হত্যা, আটক ১