মহিউদ্দিনের স্ত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিলেন মেয়র নাছির
২৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে দলের একটি সভামঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাকে ডেকে মঞ্চে তুললেও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে ঘটনার সময় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাননি।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সভা চলাকালীন নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন। হাসিনা মহিউদ্দিন ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকেও মেয়র নাছির মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। মঞ্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাকে হাতের ইশারায় মঞ্চে ডাকেন। তখন নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর তাকে মঞ্চে পৌঁছে দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন অতিথিরদের দ্বিতীয় সারিতে বসেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর সভার সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গিয়ে তাকে চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে বলেন এবং মঞ্চ থেকে নেমে যাবার নির্দেশ দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন এরপরও বসে থাকলে মেয়র আবারও গিয়ে তাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন। তখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান এবং সভার পুরোসময় মঞ্চের নিচে ডানপাশে একটি চেয়ারে বসে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিনা মহিউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে নগর আওয়ামী লীগের কেউ না কেউ ডেকেছে বলেই আমি মঞ্চে গিয়েছিলাম। সভা আহ্বান করেছে নগর আওয়ামী লীগ। সেখানে কি আমি জোর করে উঠতে পারব ? ঘটনা যা হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।’
মঞ্চের সামনে দর্শক সারিতে বসা চন্দন ধর ও নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ঘটনাটি দেখেন এবং আলাদাভাবে মঞ্চের কাছে গিয়ে মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। উভয়ে হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করেন।
জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) নিজ থেকে মঞ্চে উঠেননি। মাহতাব ভাই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উনাকে মঞ্চে ডেকে নেন। সবাই এটা দেখেছেন। এরপরও উনাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। মহিউদ্দিন ভাই বেঁচে নেই। উনার স্ত্রী কিংবা উনার পরিবারের জন্য আমরা যারা মহিউদ্দিন ভাইয়ের কর্মী, আমাদের আবেগ আছে। সেজন্য আমি মেয়র মহোদয়ের কাছে গিয়ে বলেছি, কাজটি শিষ্টাচার বর্হিভূত হয়েছে। একজন কর্মী যেভাবে নেতার কাছে গিয়ে বলেন, আমি সেভাবে বলেছি। এখানে ঝগড়া-সংঘাতের কোনো বিষয় নয়।’
চন্দন ধর সারাবাংলার কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার আগে আবদুচ ছালাম এবং আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে মেয়র নামিয়ে দিলে তারাও দর্শক সারিতে গিয়ে বসে। তবে কিছুক্ষণ পর দুজনই অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যান বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এম এ ছালাম সাহেব মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে হাসিনা মহিউদ্দিনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। সেজন্য সম্ভবত আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেব তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন।’
প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বন্ধু হিসেবে পরিচিত সমবয়সী আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে টানা ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম শহরে যারা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী অন্যতম। মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন মহিউদ্দিনের বাসায়।
মহিউদ্দিনের ছেলে নওফেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মঞ্চে বসা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মঞ্চে শুধু নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারি, সহ-সভাপতিবৃন্দ এবং এমপিরা বসবেন। এছাড়া বাকি ৫টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সেক্রেটারিরা থাকবেন। সহযোগী সংগঠনের কেউ মঞ্চে বসার কথা ছিল না। উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) নিজ থেকে মঞ্চে ওঠেননি। উনাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। বাকি দুজন আসলে না বুঝে মঞ্চে উঠে পড়েছেন। মেয়র সাহেব বলার পর তিনজন মঞ্চ থেকে নেমে যান। অপ্রীতিকর কিছুই হয়নি।’
তবে সভায় উপস্থিত নেতাদের অনেকে জানিয়েছেন, মঞ্চে নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর অনেকে উপস্থিত থাকলেও তাদের মেয়রের নেমে যাবার নির্দেশনার মুখে পড়তে হয়নি। মেয়রের অনুসারী সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ মঞ্চে ঘোরাফেরা করলেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।