‘দল থেকে উইপোকা ও ছারপোকাদের বের করতে হবে’
২৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:৫৯
ঢাকা: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে দলে যে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী উইপোকা ও ছারপোকা ঢুকেছে, তাদের বের করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল না আওয়ামী লীগ। বুকে পাথর বেঁধে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তখন সংগঠন দুর্বল ছিল না, শক্তিশালী ছিল। সেই শক্তির ওপর ভর করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং সেই পোড় খাওয়া নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছে। আমাদের সেই পোড় খাওয়া নেতৃত্বের আদলে এখন নেতাকর্মী দরকার। কোন চেতনার ভিত্তিতে দেশ রচনা হয়েছে এবং বাঙালি না বাংলাদেশি নিয়ে যাদের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে, বা ২১ বছর যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলাম না তখন আমাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে বা পেট্টোল বোমা মারার সাথে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরকে সংগঠনে দরকার নাই, তাদেরকে দল থেকে বের করতে হবে।’
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর কিং অব চিটাগাং হলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় ৬ সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পর পর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে কোনো কোনো এলাকায় আলস্য দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই সুসময় সবসময় থাকবে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। যেকোন পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ‘৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় তখন কেউ ভাবেনি আমাদের দলে এই ধরণের একটি দুর্যোগ আসবে। পেট্টোলবোমা বাহিনী, স্বাধীনতারবিরোধী চক্র, যারা আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় চান না তারা বসে নাই। সুতরাং তাদের আজকের ষড়যন্ত্রের নতুন সংস্করণ হচ্ছে আমাদের সংগঠনের মধ্যে উইপোকা-ছারপোকা ঢুকিয়ে দিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। এই ষড়যন্ত্র থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুগে যুগে যখন আওয়ামী লীগের দুঃসময় এসেছে তখন অনেক নেতা ভোল পাল্টে মূল নেতৃত্বের কাছ থেকে সরে গেছে। ক্ষমতাসীনদের সাথে আপস ও আঁতাত করেছে। কিন্তু তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কারো সাথে আপস ও আঁতাত করেনি। আজ এখানে যারা আছেন, তারাই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রাণ। তৃণমূলের কারণেই ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে ঠিকে আছে আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের যখন দুঃসময়, ক্ষমতাসীনদের সাথে আপস করে দলকে বিভক্ত করা হলো, তখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পর বিধ্বস্ত আওয়ামী লীগকে তিনি মায়ের মমতা-স্নেহে লালন করেছেন। তার নেতৃত্বে দল চারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি, প্রতিনিয়ত সেই স্বপ্নপূরণের জন্য দিনরাত্রি পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি।’
‘পরপর তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার কারণে সবাই এখন আওয়ামী লীগ করতে চান’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বরেলন, ‘দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে, সেই সম্মেলনকে সামনে রেখে দলকে পরিস্কার করার কাজে আমরা হাত দিয়েছি। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন স্তরে অনেক অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদী ঢুকেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে, সম্মেলনকে সামনে রেখে তাদেরকে পদ-পদবি থেকে বাদ দিতে হবে, সংগঠনকে পরিস্কার করতে হবে, সুবিধাবাদী মুক্ত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।