বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে হচ্ছে পানি শোধনাগার
২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৩০
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রতিদিন পানির চাহিদা হবে ১১২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সেখানে ‘পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ তথা বেজার আওতায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি ধারনাগত মহাপরিকল্পনার আওতায় সম্পূর্ণ অঞ্চলটিকে ২৯টি জোনে বিভক্ত করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার একর জমিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ৪ এপ্রিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশের উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ সাল হতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন প্রাপ্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৫৯টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের সমগ্র অংশে পানির প্রাপ্যতার বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আইডব্লিউএম এরমধ্যে ইনটার্ম রিপোর্ট-১ এবং ইনটার্ম রিপোর্ট-২ দাখিল করেছে। এই শিল্পনগরের ২এ, ২বি, ৩,৪ এবং ৫ জোনগুলোর প্রায় ২ হাজার একর এলাকায় শিগগিরই শিল্প ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাখিল করে ইনটার্ম রিপোর্ট-২ অনুযায়ী এই প্লটগুলো শিল্প ইউনিট স্থাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১০১ এমএলডি পানি সরবরাহ করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে ভূ-উপরিস্থ উৎস হতে পানি সরবরাহের জন্য ৫০ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসডব্লিউটিপি) এবং ভূ-গর্ভস্থ উৎস হতে পানি উত্তোলনের জন্য মোট ৫১ এমএলডি ক্ষমতাসম্পন্ন ২৫টি প্রোডাকশন ট্রিবওয়েল স্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। আইডব্লিউএমের সুপারিশের জন্য সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পাম্প হাউজসহ প্রোডাকশন ট্রিবওয়েল স্থাপনসহ প্রকল্পের সার্বিক ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং ব্যবসা-বানিজ্য বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচেছ, ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন, একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, ২৫টি পাম্প হাউজসহ নলকূপ স্থাপন, এক দশমিক ১৪ কিলোমিটার প্রবেশ রাস্তা, একটি জিপ ক্রয় এবং পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শাহীন আহমেদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটির আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের ২এ, ২বি, ৩, ৪ এবং ৫ জোন গুলোর প্রায় ২ হাজার একর এলাকায় পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত হলে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যান্য ইউটিলিটি সেবা যথাসময়ে স্থাপিত হলে এই জোনগুলো অবস্থিত শিল্প প্লটগুলো দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণের মাধ্যমে শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হবে। কাঙিক্ষত শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হলে প্রস্তাবিত এলাকায় শিল্পোৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে আশা করা যায়।