Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে থাই স্পা অচল, প্রতারক সমইয়োথ বিপাকে


২৮ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৩৮

ঢাকা: দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর স্পা ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু শহরের স্পা সেন্টারে যেসব থাই নারী প্রতারক কিয়াটকাট সমইয়োথ সরবরাহ করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। থাই নারী সরবরাহ থেকে সার্ভিস চার্জ বাবদ মাসিক যে আয় হতো তা দিয়েই এদেশে তার অফিস ও স্টাফ খরচ চলত। এখন সেই ব্যবসায় ধস নামায় তার স্টাফরা বেতন পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন স্টাফ চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ফলে বেকায়দায় আছেন থাই নাগরিক সিয়াম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমইয়োথ। অমিত গ্রুপের সঙ্গে কোটি টাকা প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং আত্মসাতের একটি মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন তিনি। আদালতের কাছে তার পাসপোর্ট জমা থাকায় দেশ থেকে পালাতেও পারছেন না তিনি।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলা হওয়ার পর তার এ দেশীয় সাঙ্গপাঙ্গরা তার থেকে দূরে সরে থাকলেও বিকল্প পাসপোর্ট বানিয়ে সমইয়োথের দেশ ছাড়ার পরিকল্পনায় অন্য একটি চক্র তাকে সহযোগিতা করছে। ওই সূত্রটি আরও জানায়, কথিত মুভি মেকার চন্দন ওরফে তাজুল এখন সমইয়োথের কাছে এখন আবার ভেড়ার চেষ্টা করছে। সমইয়োথের বারিধারার বাসায় এই চন্দন না ঢুকলেও ফোনে কথা বলেন প্রায়। সমইয়োথ জেলে থাকা অবস্থায় চন্দন সমইয়োথের অফিস থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ মামলার জন্য এক টাকাও ব্যয় করেননি তিনি।

সূত্রগুলো জানায়, মূলত বাংলাদেশে সমইয়োথের কোনো বিনিয়োগ নেই। দেশের বাইরে থাকতে পারে। বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেগুলোতেও তার টাকা নেই। শুধু বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্যই এসব অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়। নিজেকে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দাবি করলেও মূলত এ দেশে তার বিনিয়োগ নেই।

তিনি টুরিজম রিলেটেড কিছু প্রকল্পের ধারণা সামনে এনে বিনিয়োগকারী খোঁজেন। ফাঁদ পেতে টাকা নেন। এরকমই একটি প্রকল্প নাফ টুরিজম পার্ক। যেটি বেশ কয়েক বছর ধরে কক্সবাজার ও মিয়ানমারে মধ্যখানে হওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে কথিত চুক্তি করে তার ছবিও পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন সমইয়োথ। যাতে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়।

কিন্তু সমইয়োথের সাম্প্রতিক সময়ে নানা রকম প্রতারণা ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং প্রতারণার দায়ে দীর্ঘ সময় জেল খাটা-এসব কারণে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তার ওপর ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তার জেল খাটতে হয়েছে সেই মামলার রায় শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটা দেখেই তার সঙ্গে বিনিয়োগ করার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে চান।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের থাই সদস্য গ্রেফতার

জানা গেছে, থাই এই নাগরিক নাফ টুরিজম পার্কের পরিকল্পনায়-বার, ক্যাসিনো ও যৌন ব্যবসার পরিকল্পনা রেখেছেন। তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের কিছু প্রতারক এবং ভারত থেকে আসা কিছু অসাধু ব্যক্তি যারা বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়েছেন সমইয়োথ। কিন্তু যখন সমইয়োথ জেলে ঢুকলেন তখন থেকে এই চক্রগুলো দূরে সরে গেছেন।

সূত্রটি আরও জানায়, জামিনে বের হওয়ার পর ওই চক্রের কোনো কোনো সদস্য আবার সমইয়োথের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন। সমইয়োথকে সামনে রেখে তারা নতুন করে কোনো প্রতারণার ফাঁদ পাতার চেষ্টা করছেন।

সমইয়োথ এর মুভি পার্টনার পরিচয়দানকারী যে চন্দন ওরফে তাজুল নিজেকে সইয়োথ এর বন্ধু পরিচয় দিতেন তিনিও এখন লাপাত্তা। মামলা পরিচালনার নাম করে সমইয়োথ এর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিলেও বস্তুত সমইয়োথ জেলখানায় থাকাকালে কোনো টাকাই ব্যয় করেন নি এই চন্দন।

সমইয়োথের একটি সূত্র জানিয়েছেন, চন্দন সমইয়োথ এর জন্য আইনজীবীও ঠিক করেননি। যাতে সমইয়োথ জেলখানা থেকে জামিন না পান এবং বের হয়ে তার কাছে পাওনা টাকা দাবি না করতে পারেন।

সমইয়োথের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, চন্দনের পরিচয় সমইয়োথ নিজেও ভালো করে জানতেন না। প্রকৃত অর্থে ঢাকায় চন্দনের ঠিকানা আদৌও রয়েছে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, নিজেকে তাজুল ইসলাম চন্দন পরিচয় দিলেও সে ভারতের নাগরিক। প্রতি মাসে তিনি ভারত-বাংলাদেশ আসা যাওয়া করেন। এ জন্য কোনো মিটিংয়ে তার ছবি তোলা তিনি পছন্দ করেন না। সমইয়োথ গ্রেফতার হওয়ার আগে রাজধানী ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সমইয়োথ টাকা ফেরত দেওয়ার লক্ষে যে মিটিং করেছিলেন সেই মিটিংয়ের ছবি কেন তোলা হলো তা নিয়ে এই চন্দন বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে ছিলেন। পরিচয় গোপন রাখতে চান।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, সিয়াম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমইয়োথ থানাপোল চাকপাওনাম ওরফে কিয়াটকাটি এর বিরুদ্ধে এর বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণা ধারা ৪০৬ ও ৪২০ এবং আত্মাসাৎ এর ধারা ৪০৩ এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। এই মামলা করেছিল অমিত গ্রুপ।

সমইয়োথের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি ২০১৭ সালে একটি ক্লাবের (থাই রিক্রিয়েশন ক্লাব) লাইসেন্স অমিত গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তির সময় সমইয়োথ ১ কোটি টাকা গ্রহণ করেছিলেন। অথচ সেই শেয়ার তিনি ২০১১ সালেই অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাদী মামলাটি একই আদালতে দায়ের করার পর আদালত মামলাটি পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সমইয়োথ (পাসপোর্ট নম্বর এএ৬৩৬৫৪৯১) থাই ইন্টারন্যাশনাল রিক্রিয়েশন লিমিটেড (যা থাই ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব নামেও পরিচিত) এর মালিকানা দাবি করেন। ২০১৭ সালে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান অমিত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনে এর কাছে এ মালিকানা বিক্রি করার প্রস্তাব দেন সমইয়োথ। তাদের মধ্যে ৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়। চুক্তি সইয়ের সময়ই ১ কোটি টাকার চেক বুঝে নেন এই থাই নাগরিক। সেই টাকা তিনি তুলেও নেন। বাকি ২ কোটি টাকা মালিকানা হস্তান্তরের সময় গ্রহণ করার ছিল। কিন্তু দীর্ঘ দু বছর পার হলেও এই মালিকানা তিনি হস্তান্তর করেননি। বিষয়টি বাদীপক্ষের সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ খবর করতে শুরু করেন। তাতে বেরিয়ে আসে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের এই চিত্র। জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এই প্রতিষ্ঠানে থাই নাগরিক সমইয়োথ এর কোনো মালিকানা অবশিষ্ট নেই। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে তার শতকরা ৬০ ভাগ শেয়ার ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সমস্ত শেয়ার তিনি অন্যদেরকে টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করে দেন।

পিবিআইএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জয়েন স্টক কোম্পানির ২০১২ সালের প্রতিবেদন থেকেই সমইয়োথের কোনো শেয়ার অবশিষ্ট নেই। সর্বশেষ (২০১৮) প্রতিবেদন অনুযায়ী থাই ইন্টারন্যাশনাল রিক্রিয়েশন লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং পরিচালক মীর মো. কালাম ও মোহাম্মদ।

ক্যাসিনো থাই নাগরিক প্রতারণা স্পা ব্যবসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর