Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মোবাইল ফোনে সরকারি বার্তায় ভুল বানানের ছড়াছড়ি


২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৩০ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১১:৪৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: জাতীয় কোনো দিবস বা সপ্তাহকে সামনে রেখে দেশের সব মোবাইল গ্রাহকের মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠায় সরকার। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সংস্থা থেকে পাঠানো এসব এসএমএসে থাকে সচেতনতামূলক বার্তা। তবে এসব বার্তায় হরহামেশাই দেখা যায় ভুল বানান। কোনো কোনো এসএমএসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থার নামেও দেখা যায় ভুল বানান!

‘গভ ইনফো’ থেকে পাঠানো এসব এসএমএস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা হতে দেখা গেছে। গ্রাহকদের একটি বড় অংশ বলছেন, সঠিক বানানে সরকারি বার্তা পাওয়াও জনগণের অধিকার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি), সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোও বলছে, সরকারি বার্তায় ভুল বানান কাম্য নয়। ভবিষ্যতে সব পক্ষই এসব বিষয়ে আরও সচেতন থাকার চেষ্টা করবে।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় কোনো দিবস বা সপ্তাহকে সামনে রেখে মন্ত্রণালয় বা সংস্থাগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য বার্তাগুলো প্রথমে বিটিআরসির কাছে পাঠায়। বিটিআরসি ওই বার্তাটি বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরকে পাঠায়। পরে অপারেটরগুলো বার্তাটি গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে পাঠায়।

বিভিন্ন সময়ে ভুল বানানে পাঠানো বার্তার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি কখনো কখনো একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে আসছে। তবে কিছু কিছু মন্ত্রণালয় নিজেদের দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার প্রত্যয়ের কথাও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়গুলো।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সব গ্রাহকের মোবাইল ফোনে একটি বার্তা পাঠায়। সেখানে খোদ মন্ত্রণালয়ের নামের বানানেই ছিল ভুল। জলবায়ুর জায়গায় লেখা হয়ছে ‘জলবায়ূ’। একইভাবে ওই বার্তাতে বায়ুমণ্ডল বানানটিও ভুল দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি বার্তায় বানান ভুল কাম্য নয়। এটি আমাদের সিনিয়র ইনফরমেশন অফিসার পাঠিয়েছেন। তাকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হবে। ভবিষ্যতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা আরও সচেতন থাকব।’

তবে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল পাশা নিজের ভুল স্বীকার করতে নারাজ। সারাবাংলাকে তিনি জানান, ওই বার্তা পাঠানোর সঙ্গে তিনি যুক্ত নন।

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ অক্টোবর একটি সচেতনাতমূলক বার্তা দেশের সব গ্রাহকের মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়। সেখানে ‘ক্ষুধামুক্ত’ শব্দটির বানান ভুল ছিল।

জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বার্তা আকারে বিটিআরসিকে আমরা যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলাম, সেখানে কোনো ভুল ছিল না। এসএমএস পাওয়ার পর দেখি ক্ষুধা বানানটি ভুল। বার্তাটি দেখার পর আমি বিটিআরসিকে জানিয়েছি। তাদের আরও একটি বার্তা পাঠানোর কথা ছিল। ভুলটি বিটিআরসি’র হয়েছে বলেই আমি জানি।’

বিটিআরসি কাছে ওই বার্তাটি পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) পরিচালক নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিটিআরসিকে আমরা সঠিক বানানের বার্তাটিই পাঠিয়েছিলাম। মেসেজ আসার পর যখন দেখতে পাই ভুল, সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা বিটিআরসিকে অবহিত করি। ফলে কারও কাছে ভুল বানানের বার্তাটিও গেছে, আবার কারও কাছে সঠিক বানানটিও গেছে।’

গেল ঈদুল আজহার সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে ‘বাণিজ্য’ শব্দটিই ভুল বানানে লেখা ছিল ‘বানিজ্য’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে আমি নতুন এসেছি। বানান ভুল হয়ে থাকলে তা তো ভুলই। ভবিষ্যতে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকব।’

ওই ঈদের সময়ই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে মেয়রের পক্ষে একটি বার্তা পাঠানো হয়, যেখানে ‘কোরবানি’ বানানটি ভুল ছিল। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভুল বানান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এটি দেখব। ভুল শুধরানোর চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে যেন ভুল না হয়, প্রয়োজনে সার্কুলার দিয়ে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

গেল জুলাইয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করলে হারপিক ও ব্লিচিংয়ের ব্যবহার নিয়েও একটি গুজব ছড়ায়। সেসময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে পদ্মাসেতুতে কল্লা ও হারিপক বিষয়ের গুজব প্রতিরোধের দু’টি বার্তা পাঠানো হয়। ওই দু’টি বার্তাতেই ভুল বানান পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যখন বিটিআরসিকে বার্তা পাঠায়, তখন বিটিআরসি তা অপারেটরগুলোকে পাঠিয়ে দেয়। যদি বানান ভুল হয়ে থাকে, তাহলে তা ওই মন্ত্রণালয় বা সংস্থার দায়িত্ব।’ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পাঠানো বার্তার বানানেও ভুল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি অনেক দিন আগের। আমাদের তা চেক করে দেখতে হবে।’

বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া উইং) জাকির হোসেন খান সারাবাংলাকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রাহকের কাছে পাঠানো এসএমএসে যদি কোনো ভুল থাকে, সেই ভুলটি ওই সংস্থার, যারা কমিশনের কাছে বার্তাটি প্রচারের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিল। এটি তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হলেও হতে পারে। আমরা আশা রখাব, সংস্থাগুলো পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সচেতন থাকবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সংস্থা বা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের তথ্য বা কনটেন্ট পাঠানো হয়। সেই কনটেন্টে আমাদের হাত দেওয়ার সুযোগ থাকে না। যদি কোনো কারণে অক্ষর বা ক্যারেক্টার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা ছোট করা হয়। সেই লেখাটি আবার ফেরত পাঠানোও সময়সাপেক্ষ। ভুল থাকলে তা যদি আমাদের চোখে পড়ে, আমরা তা ঠিক করে দিই, তবে সবসময় হাত দেওয়া হয় না।’ তবে এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিটিআরসি বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বানান শুদ্ধ করার ক্ষমতা তো থাকতে হবে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সেই সক্ষমতাও নেই।’

আপনার মন্ত্রণালয় থেকেও ভুল বানানে বার্তা গেছে— এমন প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে যে বার্তাটি পাঠানো হয়, সেটি তো আর আমাকে দেখানো হয় না। আমাকে দেখানো হলে আমি ঠিক করে দিতাম। বানান ভুল থাকার মূল কারণ হচ্ছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে বাংলার ওপর তেমন জোর দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এটাই হওয়া উচিত ছিল।’

তবে এ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিটিআরসি থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু করণীয় আছে কি না, সে বিষয়ে জানাতে পারেননি মন্ত্রী জব্বার।

ভুল বানানে সরকারি বার্তার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এসএমএস পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। সরকারি বার্তায় বাংলা বানানে ভুল দেখে জাতি হিসেবে নিজেদের লজ্জিত মনে হয়। সরকারি বার্তায় ভুল বানান গুরুতর অপরাধ। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সচেতন হওয়া দরকার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি বার্তায় বানান ভুল থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজনে তাদের বার্তাটি বানান বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্ট কাউকে দিয়ে দেখিয়ে নেওয়া উচিত।’

এসএমএস বিটিআরসি ভুল বানান মোবাইল অপারেটর সরকারি বার্তা