Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা না আসলে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হবে না


২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৪৯

ঢাকা: পুঁজিবাজারকে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হলে রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে। সে সঙ্গে আর্থিক খাতের আইনি দুর্বলতা দূর করে প্রভাবশালীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। অন্যথায়, পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। কারণ অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। অধিকাংশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের কারণে বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে না পারলে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হবে না। অন্যদিকে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পিপলস লিজিং বন্ধ হয়ে গেছে। আরোও কয়েকটি লিজিং কোম্পানি আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে পারছে না। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে এই খাতে সব ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সে সঙ্গে আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে আইনি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালীরা ঋণ পরিশোধ করছে না। এই ধরনের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, বড় বড় ভাল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে পুঁজিবাজারের কোনো কাজে আসবে না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে উন্নতির জন্য ১ বা ২ হাজার কোটি টাকা দিলে কোনো লাভ হবে না। কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সবার আগে সমাধান করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে সবই ছোট ছোট কোম্পানি। এসব কোম্পানি বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুঁজিবাজারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। এর ফলে ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অবসায়নের কারণে এই খাতের সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত দুর্বল হয়ে পড়ায় পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আর্থিক খাত আগে ঠিক হতে হবে।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি মো: শাকিল রিজভী সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বেশি। ফলে অনেকে পুঁজিবাজারের পরিবর্তে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, সুদের হার কখনো এক অঙ্ক আবার কখনো দুই অঙ্কে চলে যাচ্ছে। ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে গেলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

তিনি আরো বলেন, বাজারে প্রচুর প্লেসমেন্ট ও বোনাস শেয়ার আসায় সরবরাহ বেড়েছে। এতে করে চাহিদার সাথে সরবরাহের সমন্বয় হচ্ছে না। এতে করে বাজার নিম্নমুখি হয়ে পড়ছে।

শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই সব কোম্পানি ঠিকমত লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গত দুই মাসে ডিএসইর বাজার চিত্র: গত ২২ আগষ্ট ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ২৩৬ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। টানা দরপতনে গত দুই মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৩৭ পয়েন্ট কমে গত ২৮ অক্টোবর ৪ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে নেমে আসে। একই সময়ে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ২৯ দিনই শেয়ারের দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১৬ দিন।

পুঁজিবাজারে সূচক তিন বছরে সর্বনিম্ন: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণে গত ২৮ অক্টোবর ডিএসই‘র প্রধান সূচক ৪ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে নেমে আসে। এটি আগের তিন বছরের মধ্যে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৯৮ পয়েন্ট নেমেছিল।

পুঁজিবাজার ব্যাংকিং খাত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর