বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি বিনোয়োগকারীদের
২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:৪৪
ঢাকা: পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতার অভিযোগে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ ও কমিশনারদের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল রাজ্জাক।
মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনসহ সকল কমিশনারদের অপসারণ করে সৎ, মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। সেইসঙ্গে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ক্যাসিনো মার্কেটের মতো বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, আইসিবি ও বিভিন্ন ইস্যু ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইস্যুমুল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানিকে ইস্যুমুল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে। আগামী ৩ বছর পর্যন্ত সবধরনের আইপিও, রাইট শেয়ার ইস্যু বন্ধ করতে হবে। প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতি, ডাইরেক্ট লিস্টিং পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে ২ সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের শেয়ার ধারণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানি আইনে কোথাও জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেটের কথা উল্লেখ নেই। তাই শেয়ারের কোন বিভাজন করা যাবে না। ওটিসি মার্কেটে যেসব কোম্পানি নিয়মিত এজিএম করে এবং ডিভিডেন্ড দেয় তাদেরকে মূল মার্কেটে ফেরত আনতে হবে। যেসব কোম্পানি এজিএম করে না, কোম্পানি বন্ধ আছে, সেইসব কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেইসঙ্গে কোম্পানির ব্যবসা ভালো থাকা সত্ত্বেও যেসব কোম্পানি নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোম্পানিকে ডি-লিস্টিং করা যাবে না। সম্প্রদি ডি লিস্টিং হওয়া মডার্ন ডাইং ও রহিমা ফুড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোন কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ে ডিভিডেন্ড ঘোষণার সাতদিনের মধ্যেই এজিএম করতে হবে। দুই আড়াই মাস পরে নয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই দুই আড়াই মাস পরে এজিএম করার নিয়ম নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পুঁজিবাজার উন্নয়নের স্বার্থে বহুজাতিক লাভজনক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মতো বাধ্যতামূলকভাবে তাদের বিনিয়োগের ৪৯ শতাংশ পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণ করতে হবে। কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের কোম্পানির কিছু শেয়ার (২০-২৫%) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়ে এদেশের অর্থ বিদেশি কোম্পানিগুলো লুন্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই লুন্ঠন প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ারবাজার লুন্ঠনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পুঁজিবাজারের ভয়াবহ পতনে ২০১০-২০১১ সাল পর্যন্ত যে সকল বিনিয়োগকারীরা অসুস্থ হয়ে, হার্টঅ্যাটাক করে আত্মহুতি দিয়েছেন এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে, ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ’ এর নেতাকর্মী বিনিয়োগকারীদের ওপর গ্রেফতার, হামলা, মামলা, গোয়েন্দা নজরদারি এবং মুচলেকা নেওয়াসহ সবধরনের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।