Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাস্তা পারাপারে ডিজিটাল পুশ বাটন, মিলছে না সুফল


৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১১:১৯

ঢাকা: রাজধানীর সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বিঘ্নে পথচারী পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ, জেব্রাক্রসিংসহ নানা পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে সেগুলো উপেক্ষা করেই যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে পথচারী; থেমে নেই যানবাহনের গতিও। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই এবার উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশেও চালু হয়েছে ডিজিটাল পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল পদ্ধতি। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এতেও মিলছে না সুফল।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে নির্বিঘ্নে সড়ক পারাপারে পথচারীদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতির উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

ওই দিন তিনি জানান, পথচারীদের নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আসাদ এভিনিউয়ের গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ডিজিটাল পুশবাটন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর ফলে যত্রতত্র রাস্তা পার না হয়ে পথচারীরা সারিবদ্ধভাবে পারাপার হবে। সেইসঙ্গে যানবাহনের মধ্যেও শৃঙ্খলা ফিরবে। এতে যদি কেউ আইন না মানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পদ্ধতিটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে আরও বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।

ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যালের নিয়ম অনুযায়ী সড়ক পারাপারে ইচ্ছুক কোনো পথচারী পুশ বাটনে চাপ দিলে ডিজিটাল সিগন্যালে একটি কাউন্টডাউন শুরু হবে। কাউন্টডাউনের নির্ধারিত সময় শেষ হলে পথচারীদের জন্য সবুজ সংকেত ভেসে ওঠবে সিগন্যালে। আর চালকদের জন্য ভেসে উঠবে লাল সংকেত। অর্থাৎ মোহাম্মদপুরে স্থাপিত ডিজিটাল পুশ বাটনে প্রতি ৩ মিনিট পর পর ২৮ সেকেন্ডের জন্য পথচারী পারাপারে সংকেত দিতে থাকবে। এ সময় যানবাহন চালকদের জন্য ভেসে ওঠবে লাল সংকেত। আর পথচারী পারাপারে জ্বলে উঠবে সবুজ সংকেত। সেইসঙ্গে ২৮ সেকেন্ড ধরে এলার্ম বাজতে থাকবে।

তবে অনেকেই জানেন না সড়কের এই পুশ বাটন পদ্ধতি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। আবার কেউ কেউ জানলেও তা মানতে চাইছে না। যদিও পদ্ধতিটি এখনও পরীক্ষামূলকভাবেই চলছে। তবে নিয়ম মানার ক্ষেত্রে অমান্যকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনও আগের মতই যত্রতত্র সড়ক পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। যানবাহনও চলছে তাদের নিজস্ব গতিতে। যদিও সড়কের দুই পাশে দুজন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দায়িত্ব রয়েছে, পথচারী এবং যানবাহন চালকদের পুশ বাটন সম্পর্কে সচেতন করা। কিন্তু চালক এবং পথচারী কেউ তাদের কথায় শুনছেন না।

গ্রিন হেরাল্ড স্কুল থেকে রুবাইয়া জাহান দুপুর একটার দিকে সন্তানকে নিয়ে ফিরছিলেন। তিনি সিগন্যালের অপেক্ষা না করে সড়ক পার হতে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রনি তাকে বাধা দেন‌। পরে সিগন্যাল দেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে রাস্তা পার হন তিনি। এ সময় জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটু ফাঁকা পেয়েছিলাম, তাই যেতে চেয়েছি‌। শুধু আমি নই, কেউতো নিয়ম মানছে না। আবার কখন সিগন্যাল দেবে, কীভাবে দিবে, তাও আমরা জানি না।’

একইভাবে নিয়ম না মেনে রাস্তা পার হচ্ছিলেন অপর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনসুর সালেহী। তিনি বলেন, ‘নিয়ম জানি। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা দেখে যেতে চাইছি। যদিও এটা ঠিক নয়।’ নিজের ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইন্দ্রজিৎ রায় সারাবাংলাকে বলে, ‘অনেকে নিয়ম জানলেও মানে না। আমাদের স্কুলের সবাই নিয়ম জানে। কিন্তু সবাই মানে না। রাস্তা ফাঁকা পেলেই যেতে চায়। অথচ এটা উদ্বোধনের পর আমাদের স্কুলের সবাইকে নিয়ম সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।’

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মো. রনি শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আমরা চারজন এখানে দায়িত্ব পালন করি। আমাদের কাজ হলো, ডিজিটাল পুশ বাটন ব্যবহার সম্পর্কে পথচারী এবং যানবাহন চালকদের সচেতন করা। কিন্তু কেউই আমাদের কথা মানতে চাইছে না। রাস্তা একটু ফাঁকা পেলেই পথচারী কিংবা যানবাহন চালক উভয়ই চলে যেতে চায়।’ তবে এক্ষেত্রে যানবাহনের চালকদের হাতের ইশারায় থামানো গেলেও পথচারীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে জানান তিনি।

প্রাইভেটকার চালক রাশেদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। আবার স্কুল ছুটি হলে তাকে নিয়ে বাসায়ও ফিরতে হয়। বাকি সময়টুকু আশপাশে ঘোরাফেরা করি। কিন্তু এই ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে কেউ নিয়ম মানতে চাইছে না। চালক কিংবা পথচারী সবাই যে যার মতো করে চলাফেরা করছে। কারণ, এখনও অনেকেই এই পুশ বাটন পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ পদ্ধতির কিছু ত্রুটিও রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ যেখান দিয়ে পথচারী পারাপার হবে তার একটু আগে কোনো স্পিড বেকার নেই। যদি স্পিডব্রেকার থাকতো তাহলে এমনিতেই যানবাহনের গতি কমে যেত। আর এতেই চালকরা বুঝতে পারত সামনে একটা সিগন্যাল আছে। কিন্তু এখন গতি থামানোর কোন পদ্ধতি না থাকায় সামনে সিগন্যাল থাকলেও ফাঁকা পেলেই তারা চলে যেতে চায়। এছাড়া হুট করেই পথচারীরা রাস্তা পার হচ্ছে। তবে উভয়েই যদি নিয়ম মানে তাহলে এই ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতিটি একটি নিরাপদ ও কার্যকরী উদ্যোগ হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু প্রকল্পটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে, তাই এখনই আমরা শাস্তিমুলক ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি না। আপাতত আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছি। কারণ অনেকেই এখনও জানে না এটি কীভাবে ব্যবহার করতে হয়। তবে জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে এবং এর কার্যকর সুফল মিললে ভবিষ্যতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এমন ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতি চালু করা হবে। এজন্য এটি এখন পরীক্ষামূলকভাবেই চালু করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে মহাখালী ব্রাক ইউনিভার্সিটির সামনেও আরেকটি ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুশ বাটন সিগন্যালে অত্যাধুনিক ক্যামেরা বসানো হবে। এতে পথচারী পারাপারের সময় যদি কোনো গাড়ি আইন না মানে তাহলে ওই গাড়ির বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইনগত ব্যবস্থা হয়ে যাবে। নগরবাসী সুবিধার কথা চিন্তা করে ডিএনসিসির সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সিগন্যালগুলো বসানোর কাজ করছে। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর এবং মহাখালীর দুইটি ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। যদি ভবিষ্যতে এটি কার্যকর হয় তবে আরও প্রায় ২০টি স্থানে এমন ডিজিটাল পুশ বাটন পদ্ধতি স্থাপন করা হবে।’

এজন্য তিনি পথচারী এবং চালকদের প্রতি আইন মানার অনুরোধ জানান।

ডিএনসিসি পুশ বাটন মোহাম্মদপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর