২৪ ঘণ্টা ধরে অন্ধকারে জাপান গার্ডেন সিটি
২৯ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:২৬
চব্বিশ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন জাপান গার্ডেন সিটির বাসিন্দারা। গতকাল (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ না আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। একজন বাসিন্দা টেলিফোনে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন তাদের ভোগান্তির কথা। তিনি বলেছেন, প্রায় বাইশশো পরিবার চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অন্ধকারে।
জাপান গার্ডেন সিটির বাসিন্দা বেপজা’র (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রোসেসিং জোন অথরিটি) মহাব্যাবস্থাপক নাজমা বিনতে আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা ঘটলেও এবারই চব্বিশ ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা ঘটলো। তিনি বলেন, জাপান গার্ডেন সিটির নিজস্ব সাব ষ্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সুবিধার কথা জেনে এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই এমনকি, রমজান মাসেও আট থেকে নয় ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকার ঘটনা ঘটেছে।
নাজমা বলেন, তাদের এই আবাসিকের নিজস্ব জেনারেটর সংযোগ সুবিধা থাকলেও সেটা শুধুমাত্র দুটো রুমেই পাওয়া যায়। তার বাসায় একটি শোবার ঘর ও বসার ঘরে একটি করে ফ্যান ও লাইটে জেনারেটর সংযোগ থাকলেও বাথরুম, রান্নাঘর, খাবার ঘরে কোন সংযোগ নাই। এমনকি রেফ্রিজারেটর ও কোন সুইচবোর্ডেও সংযোগ না থাকার জন্য মোবাইল বা যোগাযোগের অন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রে চার্জ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে জরুরি প্রয়োজনে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া লিফটে সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া বিপদে পড়ছেন উঁচু তোলার বাসিন্দারা।
নাজমা জানান তিনি একটি ভবনের পাঁচ তলায় থাকেন। আজ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় লিফটে এক পা দিতেই থেমে যায় সেটি। একটুর জন্য বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। তিনি অফিস থেকে মোবাইল ও চার্জ দিয়ে এনেছেন কিন্তু বাসায় চার্জার লাইট বা অন্য ডিভাইস বন্ধ হয়ে আছে। মোবাইল ফোনে চার্জ না থাকায় তার আশপাশের পরিচিত অনেকেই যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে আছেন বলে জানান তিনি।
নাজমা অভিযোগ করেন, জেনারেটরের তেলের খরচ, সাব ষ্টেশনের বৈদ্যুতিক সংযোগের রক্ষণাবেক্ষণের সমস্ত খরচ তারাই দেন। এরপরেও এভাবে বিদ্যুতহীন অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। তিনি মনে করেন, জরুরি প্রয়োজনে জেনারেটরের উপর ভরসা না করে সোলার সিস্টেমের ব্যাবস্থা করলে জাপান গার্ডেন সিটির কয়েক হাজার বাসিন্দার দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যায়।
জাপান গার্ডেন সিটির ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একটি অনলাইন টেলিভিশনের বার্তা পরিচালক মুফদি আহমদ বলেন, গতকাল রাত থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।
তিনি বলেন, জাপান গার্ডেন সিটির ২৬ টি ভবনে মোট ১৮০৩ টি ফ্ল্যাট। এই আবাসিকের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেড। আবাসিকের মধ্যেই তাদের নিজস্ব সাব স্টেশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। নির্মানের দশ বছরের মধ্যে ভবনমালিকদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও বারো বছরেও সবগুলো ভবণ নির্মান করতে পারে নি তারা। এখন পর্যন্ত ২৩ টি ভবনের ১৬২৩ টি ফ্ল্যাট মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুফদি আহমদ বলেন, জাপান গার্ডেন সিটির নিজস্ব এই সাব স্টেশন নিজেরাই দেখাশোনা করেন। এভাবে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় তারা মাঝেমধ্যেই ভোগান্তিতে পড়েন। মুফদি মনে করেন, এই সাব স্টেশন সামলানোর মতো দক্ষ ও যথেষ্ট লোকবল না থাকা মাঝেমধ্যেই বৈদ্যুতিক গোলযোগের একটা কারণ হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ খরচ গ্রাহকরা দিলেও দুর্বল ব্যাবস্থাপনার শিকার হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তিনি মনে করেন, জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেড এভাবে গারহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জাপান গার্ডেন সিটির নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার ট্রান্সফর্মারে ট্রাবলশ্যুট দেখা দেওয়ায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। তিনি বলে, এটি একটি জিআইএস –বেজড সাব স্টেশন। সাময়িক এই সমস্যার সমাধানে ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি)’র এক্সপার্টরা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বাসিন্দাদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানোর জন্য সবসময় ‘স্ট্যান্ড বাই ব্যাক আপ’ হিসেবে জেনারেটর সংযোগ রয়েছে।
জাপান গার্ডেন সিটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের নিজস্ব সাব ষ্টেশনের একটি ট্র্যান্সফরমারের বাফারেজ বিস্ফোরণ হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎ নাই। গতকাল রাত থেকেই ডিপিডিসি’র লোকজন এসে ঠিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, তারা সাময়িক এই অসুবিধা দূর করতে জেনারেটর সংযোগ দিচ্ছেন প্রতি এক ঘন্টা পর পর চার ঘন্টার জন্য।
সারাবাংলার পক্ষ থেকে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ডিপিডিসিতে ফোন করা হলে তারা এই বিষয়ে কোন কথা বলতে অস্বকৃতি জানান।