Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবছর দেশে ফিরে আসছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক


৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:০০

ঢাকা: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এখন অস্থির এই শ্রমবাজার। এছাড়া অন্য শ্রমবাজারগুলোও এরই মধ্যে নিজেদের বেকারত্ব ঘোঁচানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছেন ওইসব দেশে থাকা অসংখ্য বাংলাদেশি শ্রমিক। কাজের সুযোগ না থাকলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে সেসব দেশে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শ্রমিক ফিরে আসার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত দশ বছরে শুধু সৌদি আরব থেকেই শ্রমিক ফিরে আসার সংখ্যা সোয়া দুই লাখ। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর দেশে শ্রমিক ফিরে আসছেন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার।

বিজ্ঞাপন

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রকল্প ও হযরত আন্তর্জাতিক শাহ্জালাল বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত দশ বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত এসেছেন। এদের মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই ফেরত এসেছেন সোয়া দুই লাখ। আর চলতি বছরের নয় মাসে ফেরত এসেছেন ৩৬ হাজার ৭৫৩ জন। পেছনে ফিরে তাকালে ২০১৮ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন ৪৯ হাজার ৩৭০ জন। ২০১৭ সালে ফিরেছেন ৫০ হাজার ১৪৮ জন। ২০১৬ সালে শ্রমিক ফিরেছেন ৪১ হাজার ৬২৬ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক শ্রমবাজার থেকে দেশে ফিরে আসছেন।

এ চিত্রই বলে দিচ্ছে প্রতিবছরই শ্রমিক ফেরত আসার সংখ্যা বাড়ছেই। তবে এ বছর বিভিন্ন দেশ থেকে দল বেঁধে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা বেশি ঘটেছে। ফেরত আসা শ্রমিকদের খাদ্য, বাড়ি পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ট্রাভেল পাশ নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৭৫৩ শ্রমিক। এদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১৬ হাজার ৩০ জন, ওমান থেকে ৪ হাজার ৮৯৬ জন, আরব আমিরাত থেকে ৪ হাজার ৫৬৭ জন, কাতার থেকে ১ হাজার ৮৬৮ জন এবং বাহরাইন থেকে ৮৫৯ জন শ্রমিক নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে এসেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে দেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে ১২ সেক্টরকে সৌদিকরণ করার ঘোষণা দিয়েছে সে দেশের সরকার। এতে বিদেশি শ্রমিকের চাহিদা কমে যায় সেখানে। সৌদি আরব ছাড়তে শুরু করে শ্রমিকেরা। এরমধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। যারা স্বেচ্ছায় সৌদি ছাড়ছেনা, তাদেরকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আকামা (কাজের অনুমতি) থাকা সত্ত্বেও দেশটি থেকে চলতি বছরের নয় মাসে ১৬ হাজারের বেশি শ্রমিক ফেরত এসেছে।

শ্রমবাজারগুলোর এই পরিস্থিতি পরও সেসব দেশে লোক পাঠাচ্ছে দালাল বা প্রতারক চক্র। দালালদের হাতে প্রতারিত হয়ে কোনো কোনো শ্রমিক ১ মাসের মাথায়ও দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই জেল জরিমানা দিয়ে কোনো রকমে পার পেয়েছেন।

বিভিন্ন কারণে শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখার নজির চোখে পড়েনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করতেই নারাজ। একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, শ্রমবাজার স্বাভাবিক রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান সারাবাংলাকে জানান, প্রতিমাসেই গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক সৌদি থেকে ফিরছেন। তাহলে শ্রম বাজার কিভাবে স্বাভাবিক রয়েছে, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

শরিফুল বলেন, ‘সৌদি আরবে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি থাকার পরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে তারা আমাদের জানাচ্ছেন। পুলিশ তাদের আটক করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। আমরা যেটা জানতে পেরেছি তাদের বড় একটি অংশ গেছেন ফ্রি ভিসায়। বলা হচ্ছে, তারা যেকোনো জায়গায় কাজ করতে পারবেন। কিন্তু সৌদি আইনে যে প্রতিষ্ঠানে কাজের অনুমতি আছে তার বাইরে কাজের কোনো সুযোগ নেই। আরেকটি কারণ হলো যারা অনেক টাকা খরচ করে যান তারা নির্ধারিত সময়ে তাদের টাকা তুলতে পারেন না। তাই তারা আরো অনেক জায়গায় কাজ করেন, কোম্পানি পরিবর্তন করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে যান।’

অভিবাসন কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েকটি কারণেই শ্রমিক ফেরত আসার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে তো কোনোভাবে নিয়োগ কর্তার সঙ্গে দেন দরবার করা হয়না। যেখানে পাঠাচ্ছে, সে দেশের ভাষা, আবহাওয়া, সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা দেওয়া হয়না। যে কারণে এসব বিষয়ে শ্রমিককে মুখোমুখি হতে হয়।

এদিকে, সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো- বিএমইটি’র দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য গিয়েছেন। এই শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রায় ১৪ লাখ কোটি টাকা। এসব তথ্য প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে থাকলেও প্রতি বছর কতজন শ্রমিক ফেরত আসছেন, তার কোনো তথ্য নেই।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমবাজার থেকে শ্রমিকদের ফেরত আসার যে ঢল নেমেছে তা এখনই রুখতে হবে। না হলে ভবিষ্যৎ জনশক্তি রফতানি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, শ্রমিকদের ফেরত আসার বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। তবে ফেরত আসাদের বেশিরভাগই দালাল চক্রের মাধ্যমে শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছে। শ্রমিকরা দালালদের মাধ্যমে গেলে কোনো ধরনের সহযোগীতা করারও উপায় থাকেনা। তিনি এই দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশ না যেতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর