চীনের কমিউনিস্ট পার্টি’র এবারের প্ল্যানাম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৩০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:০৬
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার (২৮ অক্টোবর)। সম্প্রতি দেশটির সরকার চীনের ভেতর বাইরে যে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে তা মোকাবেলায় কৌশল খুঁজতে চারদিনব্যাপী এ বৈঠকে বসেছেন নেতারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে বেশ বিপাকে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তির দেশটি। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা এ মাসের শুরুতে এক প্রতিবেদনে জানায়, এবারে চীনের প্রবৃদ্ধি গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া আধা-স্বায়ত্তশাসিত শহর হংকংয়ে চলছে চীন বিরোধী বিক্ষোভ। এমন অবস্থায় সমাজতান্ত্রিক দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করতে করণীয় ঠিক করার জন্য এ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে আলোচনা করছেন।
এ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অবশ্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি নিয়মিত বৈঠক। তবে এবার কেন্দ্রীয় কমিটির এ বৈঠক বসলো ২০ মাস পর। সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির এ বৈঠক প্ল্যানাম নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন- সিপিসি’র পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, আসতে পারে বড় পরিবর্তন
সিপিসি’র ক্ষমতার কেন্দ্র যেমন
সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি দুইশোরও বেশি সদস্য নিয়ে গঠিত। কংগ্রেস চলাকালীন সময় ছাড়া এই কমিটি সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম। দলের সকল নীতি এই কমিটিতেই অনুমোদিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় কমিটির কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়। সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে এ কমিটিতে জায়গা করে নেন। কেন্দ্রীয় কমিটির বাৎসরিক অধিবেশন ‘প্ল্যানাম’ নামে পরিচিত।
প্ল্যানাম বৈঠক রুদ্ধদ্বার হয়ে থাকে। চীন সরকারের প্রতিনিধি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এতে অংশ নেন। প্ল্যানাম বৈঠক চলাকালে সকল সদস্য বৈঠকস্থলে অবস্থান করেন। বলাইবাহুল্য, এ বৈঠকে বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের কোনও সাংবাদিকের প্রবেশ নিষেধ। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে তথ্য জানানো হয়ে থাকে।
যদিও সকল সিদ্ধান্ত প্ল্যানাম বৈঠকেই অনুমোদন দেওয়া হয় তবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে আরও দুইটি শক্তিশালী কমিটি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষমতাধর ২৫ সদস্য নিয়ে গঠিত হয় ‘পলিটিকাল ব্যুরো অব কমিউনিস্ট পার্টি সেন্ট্রাল কমিটি’ যা ‘পলিটিব্যুরো’ নামে পরিচিত। পলিটিব্যুরো প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বৈঠকে বসে।
পলিটিব্যুরোর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সাত নেতাকে নিয়ে গঠিত হয় ‘পলিটিব্যুরো স্থায়ী কমিটি’। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা সাত। এই সাত নেতাই মূলত চীনের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজনৈতিক, সামরিক সকল ক্ষমতা তাদের হাতে থাকে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজে এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শি জিনপিং সাধারণত প্রতি সাপ্তায় একবার পলিটিব্যুরোর স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এবারের প্ল্যানাম যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
সর্বশেষ প্ল্যানাম অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই সময় দেশের সংবিধানে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়। সেই সিদ্ধান্তগুলো প্ল্যানাম বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট পদের ‘টার্ম লিমিট’ তুলে দেওয়া হয় তখন।
এবারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধান দুই উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের নিজস্ব বৈশিষ্ঠে দেশটিতে সমাজতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখার নতুন কৌশল প্রণয়ন এবং চীন সরকার পরিচালনায় আধুনিকায়ন। এই দুই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলের বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে প্ল্যানাম। দলের পলিটিব্যুরো স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা সাত থেকে বাড়িয়ে নয় জন করা হতে পারে।
যদিও বছরে একবার প্ল্যানাম হওয়ার নিয়ম রয়েছে তবে এবারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০ মাস পর। সমাজতান্ত্রিক চীনের সাবেক প্রধান নেতা দেং জিওপিং-এর আমলের পর এত লম্বা বিরতি আর দেখা যায়নি। চলতি বছরের আগস্ট মাসের আগেও প্ল্যানাম বৈঠক কবে হবে তা নিয়ে দলটির মধ্যে ধোঁয়াশা ছিল। তবে ওই মাসে দলের পলিটিব্যুরো অক্টোবরে প্ল্যানামের সময় নির্ধারণ করে।
এবার প্ল্যানাম বৈঠক আয়োজনে ২০ মাসের বিরতি কেন ? দলটির একজন নেতার বরাত দিয়ে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ জানায়, হংকংয়ে চীন-বিরোধী বিক্ষোভ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে সরকারের নীতি কী হওয়া উচিত এ প্রশ্নে দলের মধ্যে ব্যাপক মতানৈক্য ছিলো। প্ল্যানাম বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্তে না আসতে পারার আশঙ্কায় বৈঠক ডাকা হয়নি।
এবারের প্ল্যানামে কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের জন্য এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় ঠিক করতে আলোচনা করছেন। এই বৈঠকে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও ঠিক করা হবে। যদিও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গত প্ল্যানাম বৈঠকেই ঠিক করার কথা ছিলো তবে ওই সময় সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ফলে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা এবারের জন্য রেখে দেওয়া হয়।