দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে জিম্মি, চট্টগ্রামে মুক্তিপণ দাবি
৩০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত এক বাংলাদেশিকে অপহরণের পর চট্টগ্রামে তার পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে একটি অপরাধী চক্র। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রে বাংলাদেশির পাশাপাশি আফ্রিকার নাগরিকও আছে। অপহরণের তথ্য পেয়ে পুলিশ অপহরণে জড়িত একজনের ভাইকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর আফ্রিকায় জিম্মি ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপরাধী চক্র। দেশে ফিরে আসেন ওই নুর উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তি।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত নুর উদ্দিন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মহিউদ্দিন মুরাদের আদালতে তাকে জিম্মি রাখার পুরো ঘটনা বর্ণনা করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
নুর উদ্দিন (৩৮) চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের জাহাঙ্গীর কমিশনার বাড়ির মৃত নুর আহম্মদের ছেলে।
নুর উদ্দিনের বড় ভাই আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাই ৫ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায়। তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে সে একটি রিফিউজি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। সেখানে বাংলাদেশি ও আফ্রিকান কয়েকজন মিলে তাকে মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে আমার ভাইকে তারা কেপটাউন এলাকায় একটি ঘরে জিম্মি করে রাখে। সেখান থেকে ইমো’র মাধ্যমে আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। খুব সম্ভবত তারা আমার ভাই কানাডা চলে যাওয়ার আগে কিছু টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল।’
সালাম জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহরণের বিষয়টি গত ২০ অক্টোবর নগরীর চান্দগাঁও থানায় গিয়ে পুলিশকে অবহিত করেন তিনি। এরপর পুলিশ ইমো নম্বরের সূত্র ধরে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে এবং একজনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আব্দুস সালাম বাদী হয়ে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তিন জন হলেন— দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী সাফায়েতুল ইসলাম (২৬) ও তার ভাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার বাসিন্দা মুনতাসির ইসলাম (২৯) এবং মোশারফ হোসেন (৫২)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চার জনকে আসামি করা হয়।
সূত্রমতে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে— সাফায়েতুল ও মোশারফের ছেলে সোহেল দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকেন। তাদের পরিকল্পনায় নুর উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। সোহেল ইমো অ্যাপস ব্যবহার করে আব্দুস সালামকে তার ভাইকে মারধরের ভিডিওবার্তা পাঠান এবং ভাইকে রক্ষার জন্য ২০ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। সাফায়েতুল মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন। তার ভাই মুনতাসির মুক্তিপণের টাকা নিয়ে মধ্যস্থতা শুরু করেন। পুলিশ এসব তথ্য পেয়ে গত ২১ অক্টোবর মুনতাসিরকে গ্রেফতার করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রিংকন চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, ২৫ অক্টোবর মুনতাসিরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু হলে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিম্মি নুরকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। ২৮ অক্টোবর নুর দেশে ফেরেন।
বুধবার মুনতাসিরের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মহিউদ্দিন মুরাদ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। একই আদালতে নুরের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাইছার হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় বসে বাংলাদেশের একটি চক্র নিরীহ বাংলাদেশিকে অপহরণ করে দেশে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার একটি রহস্য আমরা উদঘাটন করেছি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।’
অপহরণ চট্টগ্রামে মুক্তিপণ দাবি টপ নিউজ দক্ষিণ আফ্রিকায় অপহরণ মুক্তিপণ দাবি