বিজিএমইএ ভবনের মালামাল সরানোয় ‘আপত্তি’ ঠিকাদারের
৩১ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:১৭
ঢাকা: ‘হাতিরঝিলের ক্যানসার’ হিসেবে পরিচিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না কিছুতেই। চলতি সপ্তাহেই এই ভবনটি ভাঙার সময় ‘চূড়ান্ত’ করা হলেও অন্তত আরও একসপ্তাহের মধ্যে ভবনটি ভাঙার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ভবনটি থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে ফের সময় পেয়েছে বিজিএমই, সে সময় নির্ধারিত আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এদিকে ভবনটি ভাঙতে যারা দরপত্র পেয়েছিল, তারাও এখন দরপত্র পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে। পর্যালোচনায় সম্মতিতে আসতে না পারলে হয়তো ভবনটি ভাঙার জন্য নতুন কোনো ঠিকাদার খুঁজতে হতে পারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)।
এর আগে, গত ২১ অক্টোবর রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে জানান, বিজিএমই ভবন ভাঙার কাজ আগামী সপ্তাহে শুরু হবে। সে অনুযায়ী ভবনে থাকা মালামাল সরিয়ে নিতে শেষবারের মতো সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরুও করেছে বিজিএমইএ।
আরও পড়ুন- বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে
তবে ওই এক সপ্তাহের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে না পারায় ফের আবেদন করে বিজিএমইএ। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় পায় তারা। এর বাইরে ভবনের মালামাল সরিয়ে নেওয়া নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দরপত্রে অংশ নেয় পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মালামাল কেনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবন ভাঙার কার্যাদেশ পেতে মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পিএনএস এন্টারপ্রাইজ ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এক কোটি টাকা, ফোর স্টার এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামিরা এন্টারপ্রাইজ ৩০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব দেয়। তবে কাজ পায় ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। ভবন ভাঙতে এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার পর এখন তারা বিজিএমইএ ভবন থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছে।
আরও পড়ুন- বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় ৪ মাসেও কোনো অগ্রগতি নেই
ভবনে থেকে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিতে গত ২০ অক্টোবর বিজিএমইএকে চিঠি দেয় রাজউক। রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, বিজিএমইএ ভবন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত ঠিকাদার মের্সাস ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা শুরু করবে। বিজিএমইএ ভবনে আপনাদের জিনিসপত্র (যদি থাকে) আগামী ২২ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হলো।
পরে মালামাল সরিয়ে নেওয়া শুরু হলে ফোর স্টার রাজউককে একটি চিঠি দেয়। সেখানে তারা মালামাল সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলে। গুরুত্বপূর্ণ মালামালগুলো সরিয়ে নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। এতে তারা শঙ্কা করছে, শর্ত পূরণ না হওয়ায় ভবন ভাঙতে যে দরে অংশ নিয়েছে, সেই অর্থ উঠিয়ে আনতে কষ্ট হবে। এসব আপত্তির কথা জানিয়ে ফোর স্টার কর্তৃপক্ষ রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখাও করে। সর্বশেষ সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) তাদের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নছরুল্লাহ খান রাশেদ সারাবাংলাকে বলেন, মালামাল সরিয়ে নিতে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বিজিএমইএকে সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা মালামাল সরিয়ে নেবেন। ৫ তারিখ ভবন আমরা আবারও সরেজমিনে দেখব। তারপর রাজউকের সঙ্গে বসে নতুন করে দর নির্ধারণ করা হবে। কারণ তারা এরইমধ্যে অনেক মালামাল সরিয়ে নিয়েছে, যেসব মালামাল অন্তর্ভুক্ত করেই আমরা দরপত্রে অংশ নিয়েছিলাম।
রাশেদ আরও বলেন, আগের শর্ত মানা হয়নি, মালামাল সরিয়ে নিয়েছে। আবার কিছু কিছু মালামাল তারা বিক্রিও করে দিচ্ছে। তাই আমরা ৬ তারিখ পর্যবেক্ষণ করে দেখব ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা উঠে আসবে কি না। সে অনুযায়ী আমরা রাজউকে দরখাস্ত দেবো। যদি তারা তা মেনে নেয়, আমরা কাজ করব। ভবন ভাঙতে রাজউকের সহায়তা চাইব। সর্বশেষ তথ্য নিয়ে ৭ তারিখ আমরা গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবো।
মালামাল সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে অবশ্য দ্বিমত পোষণ করছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মালামাল আমরা নিয়ে যাচ্ছি। মালামাল তো রেখে যাব না। এর আগে আমরা কখনো সময় চাইনি। এবার আমরা ফরমালি সময় চেয়েছি। সরকার আমাদের মালামাল সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছে।’
সরিয়ে নেওয়া মালামাল বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো মালামালই বিক্রি করা হচ্ছে না। সব মালামালই উত্তরার ভবনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
এর আগে, গত ১৬ এপ্রিল হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় ভবনে থাকা মালামালা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিনই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে আবারও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটিতে থেকে যাওয়া মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয় রাজউক।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। পত্রিকার প্রতিবেদনটি হাইকোর্ট নজরে নিয়ে ‘ভবনটি কেন ভাঙা হবে না?— তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে রায় দেন। এরপর আপিল ও রিভিউয়ে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে দফায় দফায় সময় প্রার্থনা করে বিজিএমইএ।
গত বছরের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে এক বছরের সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয় এ বছরের ১২ এপ্রিল। পরে ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।