‘টাকা দিছি, বেলুন নিয়াই যামু’
১ নভেম্বর ২০১৯ ১১:৩৪
ঢাকা: রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়ি বস্তি। মাত্র দুদিন আগেই এখানকার ৭টি শিশু গ্যাস বেলুন কিনতে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। আহতদের একজন মীম। তবে তার সঙ্গে বেলুন কিনতে যাওয়া আরেক শিশু রিয়া বেঁচে ফেরেনি। বেলুনের প্রতি প্রবল মোহই তাঁকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে গেছে। যদিও মীম তাকে বলেছিল সরে আসতে। কিন্তু রিয়া সরে না এসে- ‘টাকা দিছি, বেলুন নিয়াই যামু’ বলে জেদ ধরে। এই জেদের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই রিয়ার দেহ ছিন্নভিন্ন। তাই আর তার বেলুন নিয়ে ফেরা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রিয়ার বাবা-মা কাফনের কাপড়ে মোড়া মেয়ের টুকরো দেহটি ফেরত পেয়েছে।
রিয়ার বিষয়ে জানতে তার বাবা-মার খোঁজ করা হলেও ওই সময় তাদের পাওয়া যায়নি। কারণ তারা মেয়ের মৃতদেহ দাফন করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে গেছে। তবে আহত মীম, তার বোন ও মা-বাবার সাথে কথা হয় শিয়ালবাড়ি বস্তিতে। বিস্ফোরণের পর মীম তার মাকে জানিয়েছে, রিয়া ও মীম একই সাথে টাকা নিয়ে বেলুন কিনতে যায়। দুজনেই টাকা দিয়েছে বেলুন নিতে। এরই মধ্যে বেলুন বিক্রেতা বলেন, ‘পোলাপান তোমরা একটু সইরা যাও, ধোঁয়া বের হইতাছে। দেখি পানি দেই, কাজ হয় কিনা।’
মীমের বরাত দিয়ে তার মা কাজল জানান, বেলুন বিক্রেতার কথায় কেউ না সরলেও মীম সেখান থেকে সরে আসে। রিয়াকেও সে সরে আসতে বলে। তখন রিয়া বলে, ‘টাকা দিছি, বেলুন নিয়াই যামু।’ এর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় বিস্ফোরণ ঘটে। রিয়া সেখানেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মীম দুরে থাকলেও সেও ছিটকে যায়। চোখ ও পায়ে আঘাত লাগে। হাসপাতালে কে বা কারা মীমকে নিয়ে। পরে হাসপাতালে গিয়ে মীমকে খুঁজে পায় তার বাবা-মা।
আহত মীমের আরও জানান, তার বাবা পঙ্গু মানুষ। কিছু করতে পারে না। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়। অভাবের কারণে মাস চারেক হলো ঢাকায় এসেছে দুই মেয়েকে নিয়ে। বড় মেয়ে টপি (১৫) একটা প্রিন্টিংয়ে কাজ করে। অভাবের কারণে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে তাদের বিপদ আরও বাড়ল। মীমের যদি চোখ ভালো না হয়, তাহলে এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব তারা?- এই দুশ্চিন্তা এখন মীমের পরিবারে।
সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত মোরসালিনার (১০) সাথে কথা হয় বস্তির আরেক ঘরে। তার বাবা রাজমিস্ত্রির সহকারী মামুন শেখ ও মা আরজিনা সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর থেকে এসেছে এক মাস হলো। ওইদিন বেলুন আনতে গিয়েছিল মোরসালিনা। বেলুন নিয়ে আসার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই সে ছিটকে পড়ে সড়কে। তার বাম হাতের বাহু থেকে কোমর পর্যন্ত আঘাতের চিহ্ন। মোরসালিনার সঙ্গে বেলুন আনতে গিয়েছিল তার চাচাত ভাই আমিন (৪)। সেও মাথা আর পায়ে বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। হাসপাতালে ব্যান্ডেজ করানোর পর তাকে বাসায় নিয়েছে তার বাবা হালিম।
এরই মধে বেলুন বিক্রেতা সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ বলেন, ‘অবৈধভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুন ফুলিয়ে বিক্রি ও বিস্ফোরণে অনেকগুলো শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রূপনগর থানায় মামলা করেছে। এ ঘটনায় হতাহত সবাইকে সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া এ রকম কোথাও কেউ সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুন বিক্রি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
আরও পড়ুন:
রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৩ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু
রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, আহত আরেক শিশুর মৃত্যু
রূপনগরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, আহত বেলুন বিক্রেতা গ্রেফতার