৭ দিনের মধ্যে আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট
১ নভেম্বর ২০১৯ ১৬:৩৫
ঢাকা: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে। আসামিরা মদপানের কারণে বা নেশাগ্রস্ত হয়ে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের তদন্তে মনে হয়নি। আর সাক্ষীতেও মদপানের কথা আসেনি। তাই আসামিদের শাস্তি লঘু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার সময় পুলিশ মূলত তথ্যের অপর্যাপ্ততায় বাধার সম্মুখীন হয়েছে। উপযুক্ত তথ্য পেলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারত। আবরার কখন প্রাণ হারিয়েছে সেই রকমের কোনো তথ্যই পুলিশের কাছে ছিল না। ঘটনার দিন বুয়েটে পুলিশ কখন গিয়েছে, কী পদক্ষেপ নিয়েছে সবই চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিযোগিতার আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদের শুরুতেই আবরার ফাহাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে অডিটোরিয়ামে উপস্থিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
মো. মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যারা আবরারকে হত্যায় জড়িত তারা দুর্বৃত্ত, তারা অপরাধী। আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত হয় সে জন্য বস্তুনিষ্ঠ, নির্ভুল, শুদ্ধ ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে। হত্যাকারীদের কেউেই এখন কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় বিধায় এর তদন্তে রাজনৈতিক কোনো প্রভাব নেই। বরং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘আবরার হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বেদনার, দুঃখের, কষ্টের। এ হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম অধ্যায়। আমাদের আশ্চর্য করেছে কীভাবে এক সহপাঠী অন্য সহপাঠীকে, বন্ধু বন্ধুকে, ভাই ভাইকে হত্যা করল। এরইমধ্যে নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার চার্জশিট প্রদান করতে যাচ্ছে জেনে আমরা আশাবাদী। মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যাকারিদের যেভাবে অতি দ্রুত সময়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, আমরা প্রত্যাশা করি আবরার হত্যায় দোষীদের বিচারও একইভাবে সম্পন্ন হবে।’
কিরণ বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির নামে যে র্যাগিং, টর্চার সেল, হল দখল, আদিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস চলছে তা শুধু ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করলেই নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এর জন্য দরকার মূল্যবোধের চর্চা। বিভিন্ন হলে গেস্ট রুমের নামে টর্চার সেল বন্ধ করে ভিন্নমতের শিক্ষার্থীরা যেন নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার না হয় তার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার তৈরি না করে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘ছাত্র রাজনীতি নয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই আবরার হত্যাকাণ্ড’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তেঁজগাও কলেজকে হারিয়ে সরকারি বাঙলা কলেজ বিজয়ী হয়।
প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক হারুন উর রশিদ, আরিফুর রহমান, নয়ন আদিত্য এবং উপ কর-কমিশনার মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।