সুরমার ভাঙন ঠেকাবে ১২১ কোটি টাকার প্রকল্প
২ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:১৯
ঢাকা: সুরমা নদীকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
সুরমা নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ১৬৫০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া সাড়ে ১৮ কিলোমিটার চর খনন করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ হাজার ৫১৭টি বসতবাড়ি, ৩৪টি সড়ক, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, সাতটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া চর খননের মাধ্যমে স্থানীয় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে, সামাজিক সুরক্ষাসহ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প এলাকায় বসত বাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সুরমা নদীর ভাঙনের সম্মুখীন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৫ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৃহত্তর সিলেট এলাকার প্রধান দু’টি নদী সুরমা ও কুশিয়ারা ভারতের বরাক নদী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মনিপুর রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় উৎপন্ন হয়ে বরাক নদী মিজোরাম ও আসামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশীদে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে বরাক নদী দুভাগে বিভক্ত হয়ে একটি শাখা সুরমা নামে এবং অপরটি কুশিয়ারা নামে প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলেছে। এরপর নদীর সম্মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
সুরমা নদী একটি খরস্রোতা নদী। নদীটির গড় প্রশস্থতা দেশের অন্যান্য নদীগুলোর গড় প্রশস্থতা অপেক্ষা কম কিন্তু গড় গভীরতা অপেক্ষাকৃত বেশি। শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ কম থাকায় পলি পড়ে নদীবক্ষ উঁচু হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যা দেখা দেয় ও নদী ভাঙন প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বসত বাড়ি, রাস্তা ঘাট, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ইত্যাদি নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা বাড়বে।