মিটবে কোস্টগার্ডের আবাসন সমস্যা, অপেক্ষায় ৩০৩ কোটি টাকার প্রকল্প
৩ নভেম্বর ২০১৯ ১০:২৬
ঢাকা: কোস্টগার্ডের আবাসিক সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের ‘ঢাকা আঞ্চলিক অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ’ নামের প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এখনও প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমতি মিললে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং গণপূর্ত অধিদফতর।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, এটি বাস্তবায়িত হলে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের দাফতরিক কাজে আগ্রহ সৃষ্টি এবং সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ১০ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুর্নগঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোস্টগার্ড আইন ১৯৯৪ এর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা শুরু থেকে বাংলাদেশের কোস্টগার্ড বাহিনী অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা এবং অভ্যন্তরীণ জলসীমায় দায়িত্ব পালন করে আসছে। সম্প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় প্রায় এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশের আওতায় এসেছে। একই ধারাবাহিকতায় ব্লু-ইকনোমিতে সরকার গুরুত্ব আরোপ করেছে।
এই বিশাল সমুদ্র সম্পদ আহরণ এবং সুরক্ষায় সরকার কোস্টগার্ড বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। রূপকল্প ২০৩০ প্রণয়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ধাপে ধাপে সম্পন্ন হচ্ছে। অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি বাহিনীর জনবলের সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদিও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর ঢাকা জোনে কর্মরত সদস্যদের আবাসন ও দাফতরিক ভৌত সুবিধা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ঢাকা অঞ্চলে আবাসিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি মোট ২২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৭ সালের আগস্ট হতে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার আগারগাঁও এলাকাটি প্রশাসনিক এলাকা হওয়ায় এই স্থানে কোনো বাসস্থান নির্মাণের সুযোগ নেই। এ কারণে ঢাকা জেলার আওতাধীন বাউনিয়া ও জোয়ার সাহারা মৌজায় ২৫ একর এবং ডুমনি ও মস্তুল মৌজায় ৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই এলাকায় আবাসিক ভবন ও ঢাকা জোনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিদ্যমান কোস্টগার্ড সদর দফতর ভবনে পর্যাপ্ত স্পেস না থাকায় এই ভবনকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম কার্যক্রম, বাউনিয়া ও জোয়ার সাহারা মৌজায় ৪ লাখ ৬২ হাজার ৫৫১.৩২ ঘন মিটার ভুমি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ১০.২৫৬ বর্গমিটার ১৪ তলা বিশিষ্ট নাবিক কোয়াটার নির্মাণ, ৫ তলা প্রশাসনিক ভবন, ২ তলা মসজিদ, ৩ তলা গার্ড ও ম্যাগাজিন ভবন নির্মাণ করা হবে।
ডুমনী ও মস্তুল মৌজায় ৫৯ হাজার ২০৬.৫৭ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন, ১০ তলা অফিসার্স কোয়াটার, ১০ তলা অফিসার্স মেস, ২ তলা মসজিদ, ২ তলা ডিজি বাংলো, অভ্যন্তরীন রাস্তা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া শেরেবাংলা নগরে ৬ হাজার ৯২১ দশমিক ৫০ বর্গ মিটার বিদ্যমান সদর দপ্তর ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ, বহিঃপানি সরবরাহ, বহিঃবিদ্যুতায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বনায়ন, পিকআপ, আসবাবপত্র এবং অফিস সরঞ্জাম কেনা হবে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের আবাসন সমস্যা দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপারেশনাল এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’