কড়া নাড়ছে কৃষক লীগের সম্মেলন, আলোচনায় যারা
৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৫৬
ঢাকা: ঝিমিয়ে পড়া কৃষক লীগে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে যাচ্ছে। ৬ নভেম্বরের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্বে পথ চলবে সংগঠনটি। এবারের সর্বোচ্চ পদে ছাত্রলীগ করে আসা, আওয়ামী পরিবারের সন্তান, ক্লিন ইমেজ, দলের দুঃসময়ে যারা দলের পাশে ছিলেন— এমন নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই সংগঠনটির সর্বোচ্চ দু’টি পদে নেতা নির্বাচিত হবেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা হওয়ায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির কয়েকজন নেতার নাম আসে অপকর্মের তালিকায়। এছাড়া কৃষিকাজে কৃষকদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় কৃষক লীগ নেতাদের চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সমালোচনাও হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনটিকে সক্রিয় করতে ৬ নভেম্বর সম্মেলনের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে এবার বড় পরিবর্তন আসছে। বিতর্কিত হওয়া নেতাদের বাদ দিয়ে এবার কৃষিবিদদের হাতে এ সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কৃষিবিদদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ফিরোজ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ফিরোজসহ অনেকের নামই কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনুমোদিত ১১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিল না। পরে তাদের কেন্দ্রীয় নেতা করা হয় বলে জানা যায়।
কৃষক লীগের সম্মেলন ঘিরে সংগঠনটির সর্বোচ্চ দু’টি পদে আলোচনায় আছেন সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব, সহ-সভাপতি বদিউজ্জমান বাদশা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন, সহ-সভাপতি এম এ করিম, সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুল হক রেজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ হাওলাদার।
সম্মেলন নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষক লীগকে খুব ভালোবাসেন, এ জন্য কৃষক লীগের সম্মেলন আগে দিয়েছেন। আমরা তার এ আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।’
‘যেহেতু এটি কৃষকদের সংগঠন, সুতরাং আমরা চাইছি সম্মেলনে এর আবহ তৈরি করতে। এ ছাড়া এ সম্মেলনে নতুন নেতৃত্বে যারা আসবে, তারা কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠার যে উদ্দেশ্য সেটি বাস্তবায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি’— বলেন তিনি।
কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, ‘আমি মনে করি, আগামী ৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সর্বোচ্চ দায়িত্বে নিয়ে আসবেন। ক্লিন ইমেজধারী এবং যারা কৃষকদের পাশে ছিলেন, কৃষক পরিবারে যাদের জন্ম, এরকম নেতা দায়িত্বে আসবেন বলে আশা করি।’
সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব বলেন, ‘আমি আশাবাদী কর্মঠ, সত্য, পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতা, আওয়ামী লীগ পরিবারে যার জন্ম, সেখান থেকেই সংগঠনটির নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে দায়িত্ব দেবেন, তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরা কাজ করব। এছাড়া নেত্রী যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, তাহলে নেত্রী যেভাবে সংগঠন চালানোর নির্দেশনা দেবেন, সেভাবেই কাজ করব।’
সহসভাপতি বদিউজ্জমান বাদশা বলেন, ‘নেতাকর্মীরা দীর্ঘসময় ধরে দেখে আসছেন, এ সংগঠনের নেতৃত্বের জন্য কারা যোগ্য এবং পরীক্ষিত। সেই বিবেচনা থেকেই হয়তো সভাপতি হিসেবে তারা আমাকে প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যার হাতেই নেতৃত্ব দেবেন, আমি তাকেই সমর্থন করব।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ বলেন, ‘কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি যে দায়িত্ব দেবেন, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। ’
কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যতবার ক্ষমতায় এসেছেন, কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সফলতা নিয়ে এসেছেন। আমরা এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখব এবং প্রতিটি কৃষকের পাশে দাঁড়াব। নেত্রী যাকেই নেতৃত্বে বসাবেন, আমি তার সঙ্গে কাজ করে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়েছিল। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগেই। সম্মেলনে জেলা সম্মেলন করার কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলন হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৬ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন দলের হাইকমান্ড।