Sunday 01 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ভালোবাসা


৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:২৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাদেক হোসেন খোকার অনেক পরিচয়। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। একসময় ছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি। ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার মেয়র। এর বাইরেও তিনি ছিলেন সফল ক্রীড়া সংগঠক। বাংলাদেশে যখন মাঠের রাজনীতি ছিল, তখন তিনি ছিলেন রাজনীতির ভাষায় লড়াকু সৈনিক। ছিলেন জনপ্রিয় রাজনীতিক। বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এমপি হয়েছেন, মেয়র হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। রাজনীতির মাঠে মত ছিল, ভিন্নমত ছিল, পাল্টাপাল্টি ছিল। একাধিকবার রাস্তায় পুলিশের মার খেয়েছেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে তিনি বেশ কয়েকবার আমার আমন্ত্রণে টক শোতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মৃদুভাষী, কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড়।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতির মারপ্যাঁচে তার শেষ জীবন কাটাতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি ছিলেন। দেশে ফিরলেই কারাগারে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। দীর্ঘদিন ভুগছিলেন ক্যান্সারে। তাই দেশে ফেরার ঝুঁকি নেননি। তবে শেষ জীবনে নাকি দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন খোকা। তার আকাঙ্ক্ষার কথা নাকি প্রধানমন্ত্রীও জেনেছিলেন; উদ্যোগও নিয়েছিলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ৩ নভেম্বর তার ফেসবুক পেজে জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্কে সাদেক হোসেন খোকার পরিবার ‘ট্রাভেল পারমিট’-এর জন্য আবেদন করলে আমাদের মিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর যেহেতু পাসপোর্ট নেই সেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে ফেরার এটাই একমাত্র ব্যবস্থা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপের সূত্রে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লিখেছেন, ‘তাদের আগমনের পর বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে।’ কিন্তু দেশে ফেরার আগেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সাদেক হোসেন খোকা ফিরতে চেয়েও পারেননি। এটা আমার জন্য গভীর বেদনার। এতক্ষণ সাদেক হোসেন খোকার অনেকগুলো পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু এই পরিচয়গুলোর ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। সাদেক হোসেন খোকাকে আমি গভীরভাবে ভালোবাসি। কারণ, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

যে ক্র্যাক প্লাটুনের যুদ্ধের গল্প রূপকথাকেও হার মানায় খোকা ভাই ছিলেন তাদের একজন। আমরা জীবনে অনেককিছু হতে পারব। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কখনোই হতে পারব না। এই মুক্তিযোদ্ধারাই নিজের জীবনের মায়া না করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমরা বড় বড় কথা বলি, কলাম লিখি, টক শো করি, আওয়ামী লীগ করি, বিএনপি করি, মারামারি করি। মুক্তিযোদ্ধারা কোনো স্বার্থের জন্য যুদ্ধ করেননি। তারা মারাও যেতে পারতেন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আমার চিরকালীন শ্রদ্ধা।

যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারাও নানান দলমতে বিভক্ত হয়ে পড়েন। তারপরও মুক্তিযোদ্ধা মানেই অন্যরকম ভালোবাসার নাম। সাদেক হোসেন খোকা যতদিন মেয়র ছিলেন, প্রতিবছর মুক্তিযোদ্ধাদের একটা পুনর্মিলনী করতেন। সেখানে দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিতেন। জীবিত না হলেও নিশ্চয়ই তাঁর মরদেহ ফিরে আসবে প্রিয় স্বদেশভূমিতে। রাজনীতি ভুলে, দল ভুলে, মত ভুলে যেন আমরা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ভালোবেসে বিদায় জানাতে পারি এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর