রূপপুরের নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষায় নতুন প্রকল্প অনুমোদন
৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৩৬
ঢাকা: প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচে অনুমোদন দেওয়া হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রকল্প। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই অনুমোদন দেয়। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুমোদন দেন। পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
রূপপুর প্রকল্পটি সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ডিজাইন বেসিস থ্রেট (ডিবিটি) এবং এর বাইরের হুমকি মোকাবিলা করা হবে। সেই সঙ্গে কম্পিউটার বা সাইবার নিরাপত্তা এবং সংবেদনশীল তথ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পুর্ণ সরকারি খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এই সভায় দেওয়া সুপারিশ এবং তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানা গেছে, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও প্রতিনিধি খাতে ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হলেও পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী খরচ কমিয়ে করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। তবে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হলেও সেটি বাড়িয়ে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। শ্রমিক মজুরি খাতে ৪২ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২১ লাখ টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাই খাতে ২১ লাখ টাকার পরিবর্তে ১৫ লাখ টাকা, জরিপের জন্য ২৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা এবং অডিও ভিডিও নির্মাণে ২৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ১৫ লাখ টাকাসহ আরও বিভিন্ন খাতের খরচ কমানো হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৩০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৮ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষা (পিপিএস) ব্যবস্থা সংক্রান্ত কাজ, পিপিএস সংক্রান্ত কৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, সীমানা প্রাচীর (টহল রোড) নির্মাণ, পরামর্শক সেবা গ্রহণ, মোটর যান (৩টি জীপ, ৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ১টি মাইক্রোবাস, ২টি মোটর সাইকেল) ও জলযান হিসেবে একটি স্পীড বোর্ট সংগ্রহ, ৫৬টি কম্পিউটার সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং সেমিনার বা কনফারেন্স এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া প্রকল্পটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও মানদণ্ড এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আলোকে নিজস্ব পদ্ধতিতে পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হয়। রুপপুর প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার যথাযথ নির্দেশনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে সহায়তা দিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর অধীনে এরইমধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
৫ নভেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও আরো ৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, যশোর-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ফেনী-সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়কের ৩০তম কিলোমিটার এ ৩৯১ দশমিক ৩৪ মিটার দীর্ঘ মুহুরী সেতু এবং বক্তারমুন্সী-কাজিরহাট-দাগনভুঞাঁ সড়কের ১৩তম কিলোমিটার এ ৫০ দশমিক ১২ মিটার দীর্ঘ ফাজিলাঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার একতাবাজার হতে বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাটি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরে পর্যটন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা। সিলেট জেলার সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দশগ্রাম, মাহতাবপুর ও রাজাপুর পরগণা বাজার এলাকা সুরমা নদীর উভয় তীরের ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
প্রকল্পগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পের কাজ তাড়াতাড়ি করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া আইএমইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে পিপিআর সংশোধন করা হয়। কেননা এখনকার নিয়ম অনুযায়ী বড় ঠিকাদাররা কাজ পাচ্ছেন। বড় ঠিকাদারের পাশাপাশি দেখতে হবে যাতে ছোট এবং নতুন ঠিকাদারও যেন কাজ পায়, প্রতিযোগিতা বাড়ে। তবে মান ঠিক রাখতে হবে।
এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে আরো জানান, প্রায়ই আগ্রহ নিয়ে প্রকল্প পাস করা হয়, দালান-কোঠা নির্মাণ করা হয়। তারপরে আর বাকি কাজ হয়না। জনবল নাই, নয় যন্ত্রবল নেই। উনি বলেছেন, যে আগ্রহ নিয়ে আপনারা প্রকল্পের কাজ শুরু করেন, একই আগ্রহ নিয়ে আপনারা দয়া করে বাকী কাজগুলো করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার সঙ্গে একমত জানিয়ে পরিবল্পনামন্ত্রী বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ। এটার সঙ্গে আমি শতভাগ একমত। আমার নিজ এলাকায় এরকম কিছু স্থাপনা আছে। তড়িঘড়ি করে স্থাপনা করা হয়, তারপরে আর কাজ হয়না।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দেশের নদীগুলোকে অহেতুক সেতু নির্মাণ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনিতেই নদী গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তার উপর যদি অহেতুক সেতু নির্মাণ করা হয়। তাহলে আরও সমস্যা হবে। তাই সেতু নির্মাণ সাবধান হতে হবে। এছাড়া, এখন থেকে নতুন রাস্তা করার চেয়ে বিদ্যমান রাস্তাগুলো চারলেন এবং প্রশস্ত করা হবে।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।