বিদেশে বসেই অনলাইনে করা যাবে ভোটার হওয়ার আবেদন
৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:৪২
ঢাকা: এখন থেকে বিদেশে বসেই অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রথমেই এ সুবিধা পেতে যাচ্ছেন মালয়েশিয়ার প্রবাসীরা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে আগারগাঁও নির্বাচন ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করা হবে। তারা অনলাইনে ওয়েবপোর্টালের মাধ্যমে বিদেশে বসেই আবেদন করতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত আবেদনের ঠিকানার ভিত্তিতে উপজেলা, থানা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করা হবে।
সিইসি বলেন, প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি ভোটারযোগ্য নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী জীবনযাপন করে। তাদের অধিকাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। ফলে তারা ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারেননি। বতর্মান সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ, ভোটার হিসাবে নিবন্ধন দেওয়া এবং ডাকযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসি সচিব মোঃ আলমগীর বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসী নাগরিকদের বিদেশে অবস্থান এবং দেশে ফেরার পর বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে জাতীয় পরিচয় পত্র অপরিহার্য দলিলে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রবাসী ভোটারযোগ্য নাগরিক দেশে ফিরে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারলেও প্রবাসী নাগরিকদের এমন কোনো সুবিধা না থাকায় প্রবাসীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তথ্য সংগ্রহ ভোটার তালিকাভুক্ত করা এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দিতেই নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিরা একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন। ওয়েবসাইটটির ঠিকানা: services.nidw.gov.bd আবেদনের পর সেই সব আবেদন সঠিক কি না, ইসি তা কেন্দ্রীয়ভাবে যাচাই করবে। যাচাইবাছাই শেষে ইসির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে যোগ্য ও সঠিক আবেদনকারীদের ছবি তোলাসহ ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের মনির ছাপ (আইরিশ) নেবেন। প্রবাসীদের ফরম পূরণের ক্ষেত্রে আটটি তথ্য দিতে হবে। সেগুলো হলো—পিতা ও মাতার নাম ইংরেজি ও বাংলায়, বসবাসরত দেশের নাম, জিপ কোড, বাসা ও হোল্ডিং নম্বর, স্টেট বা প্রদেশ, ফোন নম্বর, শনাক্তকারী ব্যক্তির নাম। এছাড়া পাসপোর্ট নম্বরও উল্লেখ করতে হবে।
মালয়েশিয়া ছাড়াও পর্যায়ক্রমে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ অন্য দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা পর্যায়ক্রমে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এজন্য ভোটার তালিকা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। এর আগে ইসি সরাসরি সিঙ্গাপুরে গিয়ে সেখানে বসবাসরত প্রবাসীদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে এ বিষয়ে যথাসময়ে সিঙ্গাপুর সরকারের কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। পরে ইসি তাদের সিদ্ধান্ত পালটে মালয়েশিয়ায় অনলাইনে নিবন্ধনের পদক্ষেপ নেয়।।
১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দেন। দীর্ঘ ১৯ বছর পর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির ওপরে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বর্তমান কমিশনের এই উদ্যোগে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের অবসান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।
অনুষ্ঠানে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম বিষয়ক উপস্থাপন করেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। এসময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।