জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান
৫ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৪২
ঢাকা: সাম্প্রতিক কালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী প্রাকৃতিক ঝুঁকির দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পৃথিবীজুড়ে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা প্রভাব পড়ছে। এ সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনে দিনে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে।’ তাই জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় বিমা কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পাশাপাশি শুধু মুনাফার দিকে না তাকিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোকে মানবিক কল্যাণে কাজ করার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিমা খাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে আঞ্চলিক প্রধান হিসাবে যোগদানের তারিখ ১ মার্চ। এই ১ মার্চকে জাতীয় বিমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবনা রয়েছে। এটা আমরা বিবেচনা করার কথা ভাবছি।’
এছাড়া বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবী জুড়ে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা প্রভাব পড়ছে এবং দিনে দিনে দেখা যাচ্ছে, এ সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’
‘এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রবণ অঞ্চল। আর বাংলাদেশ হচ্ছে একটা বদ্বীপ। কাজেই এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে যাচ্ছে। আমরা একটা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা বাস করছি। প্রতিনিয়ত দুর্যোগ মোকাবেলা করতে থাকি এবং এতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়’- বলেও অভিহিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক ঝুঁকির দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার সরাসরি তদারকি করে থাকে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও এনজিওদের সমন্বয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রম সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও জীবন বিমা কাজে লাগতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ বিমা এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিমা ব্যবস্থার প্রয়োগ এখনো কিন্তু তেমন নেই। আমি আশা করি যে, আজকের এই অনুষ্ঠানের পর, যারা বিমার সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন। যাতে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলো বাঁচতে পারে।’
সরকারের পক্ষ থেকে ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে এ লক্ষ্যে ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি আমাদের যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করে তাদের আর্থিক ক্ষতি কিভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবনকে নিরাপদ করা যায়। আর বিশেষ করে জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের বিশেষভাবে বিমা স্কিম করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারে, যদি এই ধরনের বিমা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটা একটা নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্ত ঝুঁকি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন বদ্বীপ অঞ্চল বা অন্যান্য দেশগুলোতে আছে সে দেশের জনগণও লাভবান হবে। সামান্য কিছু কোনো কোনো দেশে এ জাতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশেও আমরা এটা নিতে পারি’- বলেন শেখ হাসিনা। এছাড়া উৎপাদন এবং অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বিমা কোম্পানিগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিমা কোম্পানির মালিকদের প্রতি আমার একটা অনুরোধ থাকবে, শুধু মুনাফা অর্জনের দিকে না তাকিয়ে সমাজের প্রতি যে একটা দায়বদ্ধতা আছে, সেদিকে একটু বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন। সেটাই আমরা চাই।’
টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং দেশের মানুষও আজকে ধীরে ধীরে দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসছে বলেও জানান তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। এটা আরও কমিয়ে ১৬-১৭ তে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানান তিনি।
সরকার ঝুঁকি মোকাবেলার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলোকে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশের মানুষ একদিকে যেমন দরিদ্র্য সীমা থেকে একেবারে পূর্ণ মুক্তি পাবে, আর দেশও সার্বিক উন্নয়নের পথে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ভূমিকা রাখবেন, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক বিমার মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় আরও ফলপ্রসু এবং বাস্তবমুখি কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করবে।
আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে নিয়ে যেতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবেন। ইনশাল্লাহ, আমরা এই বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। সেই লক্ষ্য আমরা স্থির করেছি।
এছাড়াও জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাংলাদেশের জন্য যে যে ক্ষেত্রগুলো প্রযোজ্য সেটাও অর্জন করতে সক্ষম হবে, সেভাবে সরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।