কেউ চান প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ, কেউ চেয়ারম্যানের অপসারণ
৬ নভেম্বর ২০১৯ ২২:০৯
ঢাকা: বিভিন্ন দাবি নিয়ে তারা বসেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। একজন চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে, আরেক জনের দাবি এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের অপসারণ। আবার ছয় দফা দাবি আদায়েও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পাচঁ তরুণ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান ও অনশন পালন করতে দেখা যায়।
তাদের বিষয়ে কৌতুহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। সামনে ভীড় করে জানতে চাই কিসের দাবিতে তারা অবস্থান নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান চাঁদের কণা: টানা ২২ দিন ধরে অনশন পালন করছেন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাদেঁর কণা। দাবি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেও চাকরি না হওয়ায় চরম হতাশা আর ক্ষোভ নিয়ে তিনি এই অনশন পালন করছেন।
শত প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও যখন চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতই তার সমাধান বলে জানিয়েছেন চাদেঁর কণা।
অনশনের কারণ জানতে চাইলে চাদেঁর কণা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জন্মের ৯ মাস পরেই পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। এরপর থেকে হাতের ওপর ভর দিয়ে বা হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। সেই ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি, বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে আছেন। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে সংসারের ঘানিটা আমাকেই টানতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধকতার পরও লেখা পড়া চালিয়ে গেছি। ২০১৬ সালে ইডেন কলেজ থেকে এমএ পাশ করেছি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেও কোথাও চাকরি হয়নি। যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি চেয়ে গত জুন মাসে আমরণ অনশন পালন করি। ওই অনশনের তিন দিন পর প্রধানমন্ত্রী চাকরির আশ্বাস দিয়ে তার এক সচিবকে চাকরির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছুদিন পর সচিব সাহেব আমার দাবি অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমাজ সেবা অফিসে অস্থায়ীভাবে হাজিরা ভিত্তিতে চতুর্থ শ্রেণির একটা চাকরি দেন। আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত চাকরি থেকে বঞ্চিত করেন। তাই আমি তার দেওয়া চাকরি করিনি এবং নিয়োগপত্র নিতে যাইনি। কারণ এটা আমার এক ধরনের অপমান বলে মনে হয়েছে। এরপর আমি গণভবনে গিয়ে মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সাথে দেখার করার চেষ্টা করেছি কিন্তু শত চেষ্টা করেও সেখানে পৌঁছাতে পারিনি।’
অনেকটা নিরুপায় হয়ে ফের আমরণ অনশন শুরু করেছি। ২২ দিন ধরে অনশন পালন করছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোন খোজ নিচ্ছে না। কবে নাগাদ দেখা পাবো তাও জানি না। খুবই মানবিক অবস্থায় দিন কাটছে আমার। এদিকে আমার সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন দু চোখে শুধু হতাশা আর অন্ধকার দেখছি। এই মুর্হতে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতই আমার শেষ ভরসা।
চেয়ারম্যানের অপসারণ চান শরিফুল ইসলাম: এর কিছুটা দূরেই একটি ব্যানার ও কিছু পোস্টার টানিয়ে অনশন পালন করছেন সিরাজগঞ্জেরই আরেক বাসিন্দা মো. শরিফুল ইসলাম বাবু। অনশনকারি শরিফুলের দাবি তার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল হাসান নান্নুকে অপসারণ ও বিচারের মুখোমুখি করা।
নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন খাটি কর্মী উল্লেখ করে তিনি তার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ‘হাইব্রিড’ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর একটি কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯১ সাল থেকে স্কুল ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্রলীগ করায় ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত তাদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। অথচ বর্তমান চেয়ারম্যান সেই বিএনপি জামায়াতের লোকজন দিয়ে তাকে মারারের পরিকল্পনা করছে। এ কারণে তার বিচার দাবি করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ৩ নভেম্বর থেকে অনশন পালন করছেন।
দিনাজপুরের ডিসি, এডিসি ভূমি ও রাজস্বের বিচার চান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সংগঠন: পাশেই ছয় দফা দাবি নিয়ে ১০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম’ নামে একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
দিনাজপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের পরিবারের সঙ্গে অসাদাচরণের দায়ে দিনাজপুরের সরহকারী কমিশনার (ভূমি), এডিসি (রাজস্ব) ও জেলা প্রশাসকসহ জড়িতদের বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে চাকরিচ্যুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত, আবাসন ও আর্থিক ব্যবস্থা এবং পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থাসহ ছয়দফা দাবিতে এ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।