পূর্বাচলের পিংক সিটিতে ২ দিনে ১১ কুকুরের রহস্যজনক মৃত্যু
৭ নভেম্বর ২০১৯ ২১:০৬
ঢাকা: রাজধানীর পূর্বাচলের পিংক সিটি আবাসিক এলাকায় গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ও বুধবার (৬ নভেম্বর) মোট এগারোটি কুকুরের সন্দেহজনক মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলীর ৫টি পোষা কুকুরও রয়েছে। অন্য কুকুরগুলোর মধ্যে ৫টি এলাকার বাসিন্দা ও পিংক সিটি আবাসিক কমিটির সদস্য সাদিয়া সাথীর। হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে এলাকার এতোগুলো কুকুরের মৃত্যুতে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আবাসিকের বাসিন্দা শাহনেওয়াজ কাকলী সারাবাংলাকে জানান, তিনি একটি সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানে তার কুকুর ‘বাটার’ও অভিনয় করেছে। গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বাটার অজ্ঞান হয়ে যায়। পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি প্রথমে সন্দেহ করেন, কেউ হয়ত মাথায় আঘাত করেছে তাই এভাবে মারা গেছে কুকুরটি। বিষ দিলে অন্যরকম গন্ধ পাওয়া যেত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
কাকলী আরও জানান, তাদের আবাসিক এলাকাটি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। মোট ৮টি রাস্তা ভেতরে। কুকুরগুলো সাধারণত লেকের পাড়ে খেলা করত। পরে এলাকার অন্যান্য কুকুর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তাদের কুকুরগুলোও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কাকলী আর প্রাণ রায় দম্পতির আরেকটি কুকুর মিল্কি একটি খালি বাড়ির বারান্দায় লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকে বের করে আনার পরদিন মিল্কিও একইভাবে মুখে রক্ত তুলে মারা যায়। এলাকার সিসিটিভিও বন্ধ ছিলো বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পিংক সিটি আবাসিকের মোট ১৪টি কুকুরের মধ্যে দুইদিনে ১১টি কুকুর মারা গেলেও সিটি আবাসিক অফিসের বাইরে একটি কুকুর বসতো, সে বেঁচে আছে বলে জানান কাকলী। এছাড়া বাইরে কিছু খিচুড়ি পাওয়া গেছে যেটা কোনো কুকুর মালিক দেননি, মৃত কুকুরদের সঙ্গে সেই খিচুড়িও পোস্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যে বা যারাই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত শনাক্ত ও শাস্তি চান এই চলচ্চিত্র নির্মাতা।
থানায় অভিযোগকারী সাদিয়া সালমা সিদ্দিকা সারাবাংলাকে বলেন, “প্রাণীর প্রতি ভালবাসা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে এলাকায় বছর তিনেক ধরে ‘পিংক সিটি এ্যানিমেল রাইটস অ্যান্ড সার্ভিসেস’ নামে একটা সংগঠন পরিচালনা করছিলাম। এ সংগঠনে আমরা যারা জড়িত সবাই মিলে এলাকায় যতগুলো কুকুর আছে সবগুলোকে সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া, বন্ধ্যাকরণসহ যাবতীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। এমনকি তাদের খাবার থেকে শুরু করে সব। কিন্তু শুরু থেকেই এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তির দ্বারা আমরা বাধা পাচ্ছিলাম। যারা কুকুরকে ঘৃণা করে তারা কোনোভাবেই চাইতো না এ সোসাইটিতে কুকুর থাকুক। তাই তারা সব সময় চেষ্টা করত কুকুরগুলো মেরে ফেলার জন্য। এভাবে আড়ালে-আবডালে লোকচক্ষুর অন্তরালে তারা অনেক কুকুর মেরে ফেলেছে। পরে আমরা অনেক কষ্টে ১৫টি কুকুরকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে কুকুরগুলোকে মেরে ফেলতে পারে এমনটা ধারণা করেছিলাম।’
‘আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা বাইরে খেলতে গিয়ে কুকুর মেরে ফেলার নানা রকমের কথা শুনত। তারা আমাদেরকে সেসব কথা বলতো। কিন্তু আমরা ভাবতে পারেনি যে তারা সত্যি সত্যি কুকুরগুলোকে মেরে ফেলবে। মাসখানেক আগে হাবিব নামে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দিয়ে কুকুরগুলো মেরে ফেলার ব্যাপারে নানা হুমকি দিয়েছিল। তাই প্রাথমিকভাবে ওই ব্যক্তির নাম্বারসহ আমি থানায় জিডি করেছি। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব তথ্য মিলবে। তাই আমাদের দাবি, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক এবং যারা কুকুরগুলোকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেককে দেশে বিদ্যমান পশু আইনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক’, বলেন সাদিয়া।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘পশু হত্যা একটি জঘন্য অপরাধ। এমন একটি অপরাধের বিষয়ে থানায় একটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টিকে অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি আমরা। ইতোমধ্যে মারা যাওয়া একটি কুকুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া পশু হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। সেখান থেকে ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর সেটি সিআইডির কাছে পাঠানো হবে।’ সিআইডি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে বাংলাদেশ প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।