বড় ভাইয়ের বদলে কারাগারে ছোট ভাই
৭ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৫৬
ঢাকা: দুই ভাইয়ের নামের মধ্যে কিছুটা মিল থাকায় বড় ভাইয়ের বদলে ছোট ভাইকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে বংশাল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। কারাগারে থাকা আসামির দাবি হত্যা মামলার আসামি বড় ভাই ইমতিয়াজ আহমেদের (৪২) বদলে তার ছোট ভাই ইশতিয়াক আহমেদকে (৪০) পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ায় গত ৫ নভেম্বর থেকে জেল খাটছেন তিনি।
ইশতিয়াকের আইনজীবী মির্জা আলী খান এ বিষয়ে বলেন, ‘রাজধানীর বংশাল থানায় একটি হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ার পর পলাতক রয়েছেন ইমতিয়াজ আহমেদ। গত ৫ নভেম্বর পুলিশ ইমতিয়াজের খোঁজে এসে ইশতিয়াককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।’
আইনজীবী বলেন, ‘বংশাল থানাধীন আলু বাজারের মমতাজ উদ্দিন আহমদের ছেলে ইশতিয়াক আহমেদকে গত ৪ নভেম্বর গ্রেফতার করে বংশাল থানা পুলিশ। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ২০১১ সালে সংঘটিত হত্যা মামলাটির বিচার চলছে। ইশতিয়াক আহমেদ ভুল করে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে আদালতে আবেদন করি। পুলিশের খাম-খেয়ালিপনায় নির্দোষ ব্যক্তি এখন জেলে আদালতকে আমরা এ কথা বলেছি। আবেদনের শুনানি শেষে বিচার মো. রবিউল আলম বংশাল থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান শাহিন স্থানীয় একটি ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নাজিরাবাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। এ সময় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন তার ম্যানেজার রুবেল ও দোকানের শ্রমিক মো. নাসির। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে তিনজন নাজিরাবাজার যাওয়ার পথে ছিনতাইকারী তাদের বাধা দেয়। টাকা ছিনিয়ে নিতে ছিনতাইকারী এক পর্যায়ে গুলি চালায়। এতে ম্যানেজার রুবেলের বুকে ও শ্রমিক নাসির উরুতে গুলি লাগে। ছিনতাইকারীরা ওই সময় ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যান।
গুলিবিদ্ধ রুবেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছিনতাই ও রুবেলের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান শাহিন বংশাল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালের ৩১ মে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।
ওই চার্জশিটে ইশতিয়াকের বড় ভাই ইমতিয়াজ আহমেদসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন রানা ওরফে সিরাজুল ইসলাম, পিচ্চি হান্নু ওরফে হান্নান, রাসেল, ফিরোজ চৌধুরী ওরফে ফিরোজ, জাহাঙ্গীর হোসেন এবং মোশাররফ হোসেন।
মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে ইমতিয়াজ আহমেদ জামিন পান। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট তার জামিন বাতিল করলেও তিনি আর আদালতে হাজির হননি। ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করতে গত ৪ নভেম্বর পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু প্রকৃত আসামি ইমতিয়াজ আহমেদকে না ধরে পুলিশ তার ছোট ভাই ইশতিয়াক আহমেদকে গ্রেফতার করেছে বলে আইনজীবী জানান।
সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘আদালত আসামি ইশতিয়াক আহমেদের আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আদালত সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’