৭ বছর পর হচ্ছে শ্রমিক লীগের সম্মেলন, উপস্থিত থাকবেন শেখ হাসিনা
৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৯
ঢাকা: অবশেষে দীর্ঘ সাত বছর পর হতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন হয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন, সক্রিয়, দক্ষ ও কর্মীবান্ধব মুখ নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন নেতাকর্মীরা।
আগামীকাল শনিবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক লীগের ‘জাতীয় সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল (দ্বিতীয়) অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে।
শ্রমজীবী মানুষের দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে থাকলেও বর্তমানে ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শ্রমিক লীগের ৩৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি দুই বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সংগঠনের সর্বশেষ সম্মেলনে শ্রমিক নেতা শুক্কুর মাহামুদ সভাপতি, ফজলুল হক মন্টু কার্যকরী সভাপতি এবং মো. সিরাজুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিটি সাত বছরেরও বেশি সময় পার করলেও ৬৪টি জেলা ইউনিটের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জেলা কমিটি গঠন করেছে। অনেক জেলায় সম্মেলন না করেই কমিটি দেওয়া হয়ছে। সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি পদ পেতে বর্তমান সভাপতি, কার্যকরী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সহসভাপতিসহ অনেকে তৎপর রয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিক লীগে স্থবিরতা, ক্ষমতার অপব্যহার, দলীয় প্রভাব বিস্তার করে পরিবহন খাতে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্ট নেতারা এবার কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না। একারণে এবার বর্তমান কমিটিরি সভাপতি সাধারণ ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনেই সম্মেলনে পদ প্রত্যাশী হলেও তাদের স্থান কমিটিতে হবে না। এবার সভাপতি পদে নতুন মুখ হিসেবে আলোচনায় আছেন- কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, মোল্লা আবুল কালাম আজাদসহ অনেকে।
শ্রমিক লীগের বর্তমান কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু ইতোপূর্বে একাধিকবার শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং পাবনা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মন্টু ১৯৬৯-৭০ সালে পাবলা জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে ছিলেন। শ্রমিক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান আকন্দ ২০০৩ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ থেকে এখন পর্যন্ত রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
শ্রমিক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ইতোপূর্বে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সহ-সভাপতি আমিনুল হক ফারুক শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১, দুই মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একবার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সোনালী ব্যাংক সিবিএ’র তিন মেয়াদে সভাপতি এবং ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন- বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সফর আলী, তোফায়েল আহমেদ, দফতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক সুলতান আহম্মেদ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, শিল্প ও সাহিত্য সম্পাদক আলাউদ্দিন মিয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোতালেব হাওলাদার এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব মোল্লা।
সংগঠনের অনেক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও সংগঠনের নেতৃত্ব শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে তেমন একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। নিজেরা তদবির বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। এদিকে সরকারের শুদ্ধি অভিযানের কারণে সংগঠনের পরিচয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত নেতারা তটস্থ রয়েছেন। তাই এবার সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন ও রদবদলের মাধ্যমে তুলনামূলক স্বচ্ছ, কর্মীবান্ধব নেতাদের ঠাঁই হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।