Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেলাপি ঋণ অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ: ডিসিসিআই সভাপতি


৯ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:০৫

ঢাকা: খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি ওসামা তাসির। তিনি বলেন, ‘যেকোনো ভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে এটি অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।’

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চিত্র’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

ওসামা তাসির বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সুদের হার নয় ও ছয় শতাংশ করার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই, বরং এখনো অধিকাংশ ব্যাংক ১১ থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকের সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে শিল্প খাতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সরকারের এক অঙ্কের সুদে ঋণ প্রদানের বিষয়টি আশাব্যঞ্জক হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় অর্থনীতিতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়নের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস ও সুশাসন একান্ত জরুরি।’

ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘খেলাপি ঋণ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে একটি পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে। যে পদ্ধতি ব্যবহার করে শনাক্ত করা যেতে পারে কারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এবং কারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি নয়।’ এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটের অনুপস্থিতি, ভালো প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত না হওয়া এবং সুশাসনের অভাবে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের সম্ভাবনা সীমিত করে রেখেছে। তাই দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট স্থাপন এবং স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

দেশের বন্দর পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান প্রধান বন্দরগুলো কন্টেইনার ব্যবস্থার উন্নতি সাধন সত্ত্বেও বন্দরের স্বল্প গভীরতা, পলি, কনটেইনার ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা, পশ্চাতভূমির সঙ্গে যোগাযোগ বন্দরের অবকাঠামো অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।’ এছাড়া দীর্ঘ পণ্য খালাস প্রক্রিয়া, সমন্বয়ের অভাব, পণ্য পরিদর্শনে ভোগান্তি, দালিলিক কার্যক্রম ও অনুমোদন দীর্ঘসূত্রিতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লিড টাইমকে বৃদ্ধি করে দেয়। তাই বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

আমাদের দৈনন্দিন গ্যাসের চাহিদা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৫০ ঘনফুট যার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ ঘনফুট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দৈনিক গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ১ হাজার ঘনফুট। এছাড়া আমাদের শিল্পখাতে যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে তার প্রতি ঘনফুটের মূল্য হচ্ছে ২৮ দশমিক ১১ মার্কিন সেন্ট। এটি ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি, তবে বিদ্যুতের মূল্য তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি ছয় দশমিক ছয় ভাগ হারে হ্রাস পেয়ে এক দশমিক শূন্য দুই মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই রফতানির পরিমাণ ছিল এক দশমিক ০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাভারে স্থানান্তিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সিইটিপি স্থাপনের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় সেখানে অবস্থিত টেনারি কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্ট হতে পারছে না। কমপ্লায়েন্সের অভাবে স্থানীয় কাঁচা চামড়া রফতানি উৎপাদনকারীদের নিকট বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ডিসিসিআই দ্রুত কেন্দ্রীয় সিইপিটি স্থাপন এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে।’

পোশাকশিল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প বার্ষিক সাত দশমিক ছয় শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বর্তমানে প্রথম চার মাসে পোশাক রপফতানি ছয় দশমিক ৬৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। উচ্চ পরিবহন ব্যয়, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৬ দশমিক এক শতাংশ। উদ্বেগের বিষয়, পেশাগত দক্ষতার অভাবে তুলনামূলক বিচারে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা ভারতের প্রবাসী শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতন পাচ্ছে।’ এছাড়া, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের মোট রফতানি পণ্য ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তাই রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ সম্প্রসারণে আমাদের বিস্তৃত কৌশল অবলম্বন করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়াকার চৌধুরী, ইমরান আহমেদসহ ডিসিসিআইয়ের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঋণ খেলাপী ডিসিসিআই সহসভাপতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর