৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
৯ নভেম্বর ২০১৯ ২১:৩৩
চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে উপকূলবর্তী উপজেলাসহ মহানগরের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে সারাদিনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে শনিবার (৯ নভেম্বর) সারাদিন মাইকিং ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর ফরহাদ শামীম জানান, পতেঙ্গা সি-বিচসহ আশপাশের এলাকা থেকে ভাসমান দোকানগুলো তুলে দিয়ে সব লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলায় সর্বমোট ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৪০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাসহ জেলার সকল সরকারি অফিস সারাদিন খোলা রেখে ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষণিক জরুরি তথ্য সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় নগদ টাকা, জিআর চাল, শুকনো খাবার, ঢেউটিন ও তাঁবু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত আছে ২৯০টি মেডিকেল টিম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, স্কাউট, সেচ্ছাসেবক টিমসহ সকল সহযোগী সংস্থা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় থেকে চট্টগ্রাম মহানগরসহ ১৫টি উপজেলার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুল থেকে নিজের ও পরিবারের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য বিপদ সংকেতের এলাকার জনগণ শনিবার ভোর থেকেই নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। মহানগরীর সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ী এলাকাগুলোতেও ব্যাপক মাইকিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে নিরাপদে অবস্থান নেওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫টি উপজেলা এলাকার দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।’
পতেঙ্গা বিচ, কাট্টলী বিচ, নেভাল এলাকা, লালদিয়ার চর এলাকা, সীতাকুণ্ড উপকূল, সন্দ্বীপ, বাঁশখালি, আনোয়ারা সমুদ্র উপকূল এলাকার জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাণহানি এড়াতে জেলেদেরকে নৌকা ও ছোটো মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে যেতে জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর ফরহাদ শামীম আরও জানান, মতিঝর্ণা-বাটালিপাহাড় সংলগ্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ অবস্থানে সরে যাবার আহবান জানিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও স্থানীয় মসজিদ থেকে নিয়মিতভাবে মাইকিং করা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিকটবর্তী ‘লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে। সকাল থেকে মোট ১৮টি পরিবারের ২৯ জন এ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। তাদের মাঝে খাবার ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।’
তিনি জানান, চান্দগাঁও সার্কেলের আওতাধীন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ও তার প্রভাবে ভারী বর্ষণ, পাহাড় ধসের আশংকা সংক্রান্ত মাইকিং চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই ‘রৌফাবাদ আদর্শ বিদ্যালয়’ ও ‘আল হেরা ইসলামিয়া মাদ্রাস‘কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় পাহাড় হতে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত রৌফাবাদ আদর্শ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ পরিবার ও আল হেরা ইসলামীয় মাদ্রাসায় ১০০ পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। জেলাপ্রশাসন হতে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া মহানগরের এসিল্যান্ডদের নেতৃত্বে পাহাড় থেকে লোকজন সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য অভিযান চলছে।