মধ্যরাতে আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল
৯ নভেম্বর ২০১৯ ২১:০৫
ঢাকা: উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শনিবার (৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে সুন্দরবন অতিক্রম করবে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে। তবে বাতাসের গতিবেগ কমে ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগে এটি এখন অবস্থান করছে। ওই এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাবের প্রভাব কিছুটা পড়েছে বলেও জানান আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক আয়েশা খাতুন।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে উপকূলের ২১০ থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। দুপুরের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৩০ থেকে ১৫০। বিকেলে তা কমে গিয়েছিল ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। বর্তমানে ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার ঘণ্টায় এর গতিবেগ রয়েছে। এভাবে গতিবেগ কমতে কমতে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার এলে ঘূর্ণিঝড়টি প্রশমিত হয়ে যাবে।
তার আগে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার কথা রয়েছে। কলকাতার আলীপুর আবহাওয়া দফতর থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এখন ওডিশা উপকূল হয়ে ধেয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কলকাতার সব ফেরি সার্ভিস।
এছাড়া রাজ্য সরকার কলকাতার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে স্থাপন করেছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। এরই মধ্যে কলকাতাসহ ৭ জেলার সব বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব মোকাবিলায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এছাড়া চট্টগ্রামকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
‘বুলবুল’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এ ছাড়া এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ থেকে ৯ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ অবস্থায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলার তথ্য ও সার্বিক যোগাযোগের জন্য অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম খুলেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ৮০১ (ক) নম্বর কক্ষটিতে কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রম চলবে। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর: ০২-৯৫৪৬০৭২
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনোজ কান্তি বড়াল কন্ট্রোল রুমের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিসহ সব কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত দফতরসমূহের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৯ ও ১০ নভেম্বরের সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বিকেল থেকেই চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও বরিশাল থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বিমানের দুবাইগামী একটি ফ্লাইট একই কারণে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী বিমানের ২টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আকাশপথে বেসরকারি ফ্লাইটগুলোও বাতিল হয়ে গেছে। বিকেলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে যাত্রী তুলে আবার নামিয়ে আনা হয়েছে।