Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩২ বছরেও গড়ে ওঠেনি নূর হোসেন স্মৃতিস্তম্ভ


১০ নভেম্বর ২০১৯ ২১:০৯

পিরোজপুর: আজ ১০ নভেম্বর, শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রামের অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে হাজারও মানুষের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন যুবক নূর হোসেন। ওইদিন স্বৈরাচার সরকারের সশস্ত্রবাহিনী জনতার প্রতিবাদ মিছিলে নির্বচারে গুলি চালায়। এতে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়। গণতন্ত্রের জন্য শহীদ হন তিনি। প্রতিবছর এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলেও ৩২ বছরেও নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় তাঁর স্মৃতি রক্ষায় গড়ে তোলা হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

বিজ্ঞাপন

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের জন্মভিটা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নিভৃতপল্লি সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাঁটিবুনীয়া গ্রামের বাড়িতে স্মৃতি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তাঁর বংশধর ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে শহীদ নূর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের সাথে তাঁর বংশধরদের কথা হয়। নূর হোসেনের বড় চাচা মৃত মোকলেসুর রহমানের দুই ছেলে ওই বাড়িতে আলাদা বসবাস করেন। আর নূর হোসেনর পৈত্রিক ভিটায় তাঁর চাচাত ভাই মো. রুহুল আমীন হাওলাদার বসবাস করেন।

রুহুল আমীন হাওলাদার জানান, নূর হোসেনের বাবা ও চাচারা পাঁচ ভাই। তাঁর বাবা মজিবর রহমান হাওলদার ২০০৫ সালে মারা যান। তিনি পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। এ ছাড়া নূর হোসেনের অপর তিন চাচা মোকলেসুর রহমান হাওলাদার, চাঁন মিয়া হাওলাদার, রতন আলী হাওলাদার মারা গেছেন । নূর হোসেনের ছোট চাচা লাল মিয়া হাওলাদার বেঁচে আছেন। তিনি রাঙামাটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তবে গ্রামে নূর হোসেনের বড় চাচার ছেলেরা ছাড়া বংশধরদের কেউ থাকেন না।

রুহুল আমীন হাওলাদার জানান, নূর হোসেনের বাবা মজিবর রহমান দেশ স্বাধীনের আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান। সেখানে তিনি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে নিয়মিত গ্রামে আসা-যাওয়া ছিল তার। নূর হোসেনের জন্ম ঢাকায়। তারা চার ভাই ও এক বোন । নূর হোসেন দ্বিতীয়। তাঁর অপর ভাইবোনরা হলেন- আলী হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও বোন শাহানা বেগম। তারা সবাই ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তবে মজিবর রহমান সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যেতেন। নূর হোসেনও গ্রামে আসত।

বিজ্ঞাপন

নূর হোসেনের শহীদ হওয়ার বিষয় নিয়ে বলেন, ‘তখন তো মোবাইল ফোন ছিল না। আমরা ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে গ্রামে খবর পাই সদরের টেলিফোন অফিসের মাধ্যমে। জানতে পারি যে, নূর হোসেন ঢাকায় গুলিতে মারা গেছে। এর দুইদিন পর বিস্তারিত জানতে পারি আমরা। নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পর আমার চাচা কয়েকবার গ্রামের বাড়ি আসছেন। ২০০৫ সালে তিনি মারা যান। তবে চাচাত ভাই ও বোনের সাথে আমাদের কথা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাই গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। তবে জন্মভিটায় শহীদ ভাইয়ের স্মৃতিরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা হলো না। ভাইয়ের নামে একটা এবতেদায়ী মাদরাসা করেছিলাম। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা এখন বন্ধ হয়ে আছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় কেবল এ বছর ইট বিছানো হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু না। মাদারাসাটা চালু করতে চাই। পাশে একটি পাঠাগার আর শহীদ ভাইয়ের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানাই।

জানা যায়, ঢাকায় মঠবাড়িয়ার কয়েকজন তরুণ মিলে শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় ‘জাগো লক্ষ নূর হোসেন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এছাড়া নূর হোসেনের গ্রাম ঝাঁটিবুনীয়া ও পূর্ব সাপলেজা গ্রামের কতিপয় তরুণ মিলে গড়ে তুলেছেন ‘নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ’। সংগঠন দুটি শহীদ নূর হোসেন দিবসে স্মরণসভার আয়োজন ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারছে না।

নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. নূরুল আমীন রাসেল বলেন, ‘১৯৯২ সালে আমরা গ্রামের তরুণরা মিলে সংগঠনটি গড়ে তুলি। কিন্ত সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তেমন সাড়া না পেয়ে আমরা কোনো রকম দিবসটি পালন করে আসছি। তবে শহীদ নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও একটি পাঠাগার নির্মাণের দাবি জানাই।‘

এ বিষয়ে সাপলেজা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমি গর্বিত যে শহীদ নূর হোসেন আমার ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। তাঁর পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতি সুরক্ষা করা হলে আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।’

মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘শহীদ নূর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। সে মঠবাড়িয়ার বরেণ্য সন্তান। তাঁর জীবনদানের ইতিহাসের জন্য আমরা গর্বিত। তবে তাঁর স্মৃতি রক্ষায় পৈত্রিক ভিটে মাটিতে কোনো কিছু গড়ে ওঠেনি। আমি মঠবাড়িয়া বাসীর পক্ষ থেকে তাঁর পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

গণতন্ত্র পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার শহীদ নূর হোসেন দিবস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর