‘বুলবুল’র আঘাতে ৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
১০ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:৫২
ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশে বড় ধরনের আঘাত না করলেও প্রচণ্ড ঝড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে উপকূলীয় জেলা গুলোর পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে গণমাধ্যমে চারজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করলেও সরকারি হিসাবে দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের একজন প্রমিলা মন্ডল (৫০)। বাড়ি খুলনার দাকোপ। তিনি আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কাউকে না বলে নিজ ঘরে ফিরে গেলে গাছ চাপায় নিহত হন। এছাড়া আরেকজন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ এলাকার হামিদ কাজি (৬৫)। নিজ ঘরে অবস্থান করার সময় গাছচাপায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া ঝড়ে আহত হয়েছেন ৩০ জন।
এদিকে উপকূলীয় ১৪ জেলায় ৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটে কিছু ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি এবং গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভোলার লাল মোহনের লর্ডহান্ডিন্সে ঝড়ে ৫/৬টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে ঘরবাড়ি ভেঙেছে, বরগুনার পাথরঘাটার একটি বিদ্যালয়ের চাল উড়ে গেছে। পটুখালীতে ৮৫টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনী, বরিশাল, লক্ষীপুর, পিরোজপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। খুলনা বিভাগে কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। সব মিলিয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে পাঁচ হাজারের মতো ঘরবাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষির তেমন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পটুয়াখালী জেলায় আমন ধান বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। আমন পানি সহনীয় ফসল বলে, ক্ষতি নিরূপন করা হয়নি। তবে শীতের সবজি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টি কমে এলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ করে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ওইসব এলাকা পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে বৈঠক করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ডা. এনামুর রহমান জানান, ৫ হাজার ৫৮৭ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জনকে সরিয়ে নেওয়া গেছে। যে কারণে মানুষের জানমাল রক্ষা পেয়েছে। এটা বড় সফলতা। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার চিকিৎসাসেবা দিতে পেরেছেন সফলভাবে। ঘুর্ণিঝড় আঘাত করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে শুরুতেই উপকূলীয় ১৪ জেলায় পাঁচশ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং প্রতি জেলায় ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গেল দুদিন ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তার দিক নির্দেশনায় কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।’
সুন্দরবন বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের যেন আরও যত্ন নেওয়া হয়, নতুন নতুন গাছ লাগিয়ে বনকে শক্তিশালী করা হয়।’
সুন্দরবনের প্রতি কেউ যেন অযত্ন-অবহেলা করতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।