Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-জোয়ারে ডুবেছে শ্যামনগর


১০ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:১০

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এখনও পানির নিচে অনেক রাস্তা। জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে উপজেলার অধিকাংশ ঘের। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চিংড়ি ও কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা।

রোববার (১০ নভেম্বর) শ্যামনগরের কয়েকজন বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সুন্দরবন লাগোয়া মথুরাপুর জেলেপল্লির বাসিন্দা সুমন মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইলার পর এবারও জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকেছে। জেলাপাড়ার অনেক ঘর ভেঙে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের।’ এই পল্লির আরেক বাসিন্দা চিত্ত সরকার বলেন, ‘ক্ষতি কম হলেও আমাদের তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। এখনও রাস্তাঘাট চলার উপযোগী হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তায় এখনও এক থেকে দেড় ফুট পানি রয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সব বাড়িঘরই আক্রান্ত হয়েছে। এমন কোনো জায়গা নেই যে সেখানে পানি ঢোকেনি। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চিংড়ি ও কাঁকড়ার সব ঘের এক হয়ে গেছে। এতে চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল সারাদিনই বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত বাড়তে থাকলে ঝড় ও বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে। রাত তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত মনে হচ্ছিল উপর থেকে কেউ যেন পানি ঢেলে দিচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ছিল ঝড়ও।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার উপর গাছ পড়েছিল। সেই গাছগুলো কোনো রকমে কেটে মোটরসাইকেল চলার মতো উপযোগী করা হয়েছে। তবে সব রাস্তাঘাট এখন চলাচলের উপযোগী হয়নি।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে নয় হাজার খানার মধ্যে প্রতিটি পরিবারেরই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে। কারও গোয়ালঘর, কারও শোবার ঘর, কারও হাঁস-মুরগি রাখার ঘর নষ্ট হয়েছে। কারও ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে। সব মাছের ঘের নষ্ট হয়েছে। ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।’

বিজ্ঞাপন

উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুসুদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এলাকায় অন্তত পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে। উপকূলের কাছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে বলে খবর পাচ্ছি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলোও।’

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আমার ইউনিয়ন লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রচণ্ড বাতাসে অধিকাংশ গাছ উপড়ে গেছে। কাঁচাঘর সব নষ্ট হয়েছে। চিংড়ি ঘের ও ধানের জমি পানিতে একাকার হয়ে গেছে। নদীতে পানি বাড়ছে। এই এলাকার কিছু বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। এখন জোয়ার চলছে, যে কারণে সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

শ্যামনগরসহ খুলনা অঞ্চলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বেডস)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মাকসুদুর রহমান রোববার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোররাত থেকে ঘূর্ণিঝরের আঘাত শুরু হয়। সকাল পর্যন্ত এর তাণ্ডব চলে। এতে এলাকার অধিকাংশ ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু বাঁধও ভেঙে গেছে। ঘেরগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।’ তবে তিনি মনে করেন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, ‘গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা উপযোগী হওয়া মাত্র আমরা উদ্ধার কাজ শুরু করব।’

সাতক্ষীরা আবহাওয়া দফতরের উপপরিচালক জুলফিকার আলী জানান, ‘রাত তিনটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮১ কিলোমিটার। সকাল নয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-জোয়ার টপ নিউজ শ্যামনগর উপজেলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর