Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতিতে বইছে কি সুবাতাস?


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৩৩
হাসান আজাদ ও আসাদ জামান

ঢাকা: ইতিবাচক ধারায় ফিরছে রাজনীতি! রাজনীতিতে একটা সুবাতাস বইতে শুরু করেছে— এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল হওয়ার পর দলটির নেতা-কর্মীরা যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছেন, তা দেশের রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ার ধরন-ধারণকেও সুস্থ রাজনীতির চর্চা হিসেবে দেখছেন তারা। এমনকি পুলিশের ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।

বিজ্ঞাপন

ধারণা করা হচ্ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের কারাদণ্ডের পর ২০১৪ সালের মতো দেশে  আবারো সহিংসতা বাড়বে; শুরু হবে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন! বিশেষ করে মামলার শুনানির শেষ দিন হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের ওপর বিএনপি কর্মীদের হামলা, প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলা, রায়ের দিন বিএনপি চেয়ারপারসনের আদালতে যাওয়ার পথে মগবাজার-কাকরাইল এলাকায় বিএনপির শক্তি প্রদর্শন, কয়েকটি মোটোরবাইক পুড়িয়ে দেওয়া এবং প্রাইভেট কার ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটায় মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা আরো পাকাপোক্ত হয়।

আর সহিংস কিছু হলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ‌ছেড়ে কথা বলবে না— এমনটিই ধারণা ছিল সবার। কিন্তু ঘটছে ঠিক উল্টোটা! খালেদা জিয়ার রায়ের পর ইতিবাচক আচরণ করছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপি!

দলীয় প্রধানের পাঁচ বছরের সাজা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতাসহ (যিনি বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান) আরো ৪ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা হওয়ার পরও শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশনাই হচ্ছে ‘কোনো সহিংসতা নয়’। তাই দল এমন কোনো কর্মসূচি দেবে না, যা সংঘাতকে উসকে দিতে পারে। বিএনপির সিদ্ধান্তকেই রাজনীতিতে ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

তাদের মতে, বিএনপি সংযত আচরণ করে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে। কিন্তু দলটির অতীত ইতিহাসে জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের নজির থাকায় এত দ্রুত বিশ্বাস অর্জন সম্ভব হবে না। এই আস্থাহীনতার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দেশের সবচেয়ে সহিংস দল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়াকেই দায়ী করছেন তারা।

তবে আশার কথা হচ্ছে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দুই দফায় যে পাঁচ দিনের ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি বিএনপি পালন করেছে, সেখানে  জামায়াত নেতাদের দেখা যায়নি। কর্মসূচিতে জোটের প্রায় সব নেতা বক্তব্য দিলেও জামায়াতের কেউ বক্তব্য দেননি।

শুধু তাই নয়, কর্মসূচি পালনের সময় বিএনপি নেতাদের বক্তব্য, আচার-আচরণ, স্লোগান, পোশাক-আশাকেও একটা ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল এসব অনেকটা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছিলো। তাতে টিকে থাকতে কর্মীদের শুধু নয়, নেতাদেরও জিনসপ্যান্ট, কেডস, টি শার্ট পরে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে মাঠে নামতে দেখা যেতো। কিন্তু এবারের আন্দোলনে কোট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পাজামায় রাজনৈতিক আভিজাত্যে তাদের দেখা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে একটা পরিপাটি ভাবও তারা লক্ষ্য করছেন।

পুলিশের আচরণকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা। পুলিশের মারদাঙ্গা চেহারা ও সাজ এখন দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। দাঙ্গা পুলিশের উপস্থিতিও নেই। বিশেষ করে গত ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার শেষ শুনানির দিনে বিএনপির কর্মীদের হাতে পুলিশ যেভাবে আক্রমনের শিকার হয়, এবং তাতে যে ধৈর্যের পরিচয় দেয় তা ছিলো সাম্প্রতিক সময়ের বিরল দৃশ্য। পুলিশের বন্দুক কেড়ে নিয়ে তা ভেঙ্গে ফেলা, প্রিজন ভ্যান ভেঙ্গে তা থেকে আসামি ছিনতাইয়ের পরেও পুলিশ শান্তভাবে মোকাবেলা করেছে।

আসামি ছিনতাই ও পিজন ভ্যান ভাঙচুরের সময় এক হামলাকারীর সেলফি তোলার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বটে, তবে এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় পুলিশ সেদিন ছিল কতটা শান্ত।

এদিকে বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক জনসমাগমও চোখে পড়ছে। তাতে রাজধানীর যেখানেই সমাবেশ হচ্ছে দেখা যাচ্ছে যানজট লেগে যাচ্ছে। তার বিপরীতে জনদুর্ভোগ কমাতে রাজপথে ‘ট্রাফিক পুলিশের’ কাজ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচলের  ব্যবস্থা করেছেন। মেনে চলার চেষ্টা করেছেন পুলিশের প্রতিটি অনুরোধ এমন দৃশ্যও দেখা গেছে।

এদিকে ক্ষমতাসীনদের আচার-আচরণ, কথা-বার্তায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিক বক্তব্যে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বড় একটি দলের চেয়ারপারসন। তার অমর্যাদা হয় এমন কোনো আচরণ কেউ করবে না। তিনি যথাযথ সম্মানের সঙ্গেই কারাগারে থাকবেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল যতবার বক্তব্য দিয়েছেন ততোবারই বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা খালেদা জিয়ার পাওয়া উচিত এবং তিনি সেটা পাচ্ছেন। কোনো অমর্যাদাকর আচরণ তার সঙ্গে করা হবে না।’

এমনকি সব সময় ‘আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে অভ্যস্ত’ এমন আওয়ামী লীগ নেতাদেরও মুখে এখন নরম সুর। এবং সকলেই প্রায় একই ভাষায় কথা বলছেন। তাদের একটাই বক্তব্য, ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়ের হওয়া মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে আমাদের তেমন কিছু বলার নেই।

বুধবার (১৪ ফেব্রুযারি) দেওয়া এক বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘ আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বেগম খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মন-মানসিকতার এমন ইতিবাচক পরিবর্তনকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সুবাতাস’ হিসেব দেখছেন বিশ্লেষকরা। এটা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে হানাহানিমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করবে বলে তাদের ধারণা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায় হওয়ার আগে আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দেশ আবারও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। রায়ের পর বিএনপি বেশ সংযত আচরণ করছে। এই ধরনের সংযত আচরণের পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হলো বিএনপির নেতৃত্ব সংক্রান্ত দুর্বলতা। আরেকটি হলো জনগণের সমর্থন আদায় করা।’

এই ইতিহাসবিদ আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে অবশ্যই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে। বিদেশি বন্ধুরাও চায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিক। সে কারণেই হয়তো আওয়ামী লীগ নেতারা নরম সুরে কথা বলছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর বিএনপি যেভাবে আন্দোলন করছে তা রাজনীতির জন্য ভাল লক্ষণ।’

তবে এখনই শেষ কথাটা বলার সময় আসেনি, এমন মত দিয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিএনপির সঙ্গে এখনো রয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াত। আগের নির্বাচনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ অবস্থায় তাদের জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সময় লাগবে।

এইচএ/এজেড/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর