বুলবুলে ফসলের ক্ষতি ২৬৩ কোটি টাকা
১১ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:০৯
ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে দেশের ১৬ জেলায় ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এতে ২৬৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। আর ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৫০ হাজার কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশের ১৬ জেলায় ২৬ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হেক্টর বীজতলা। ওই জেলাগুলোতে আমনের আবাদ হয়েছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। বুলবুলে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৪ হেক্টর আমন ধান। ৩১ হাজার ১৯২ হেক্টর সবজির মধ্যে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৮৮৪ হেক্টর। সম্পূর্ণ ৫০ হাজার হেক্টর আলু ক্ষেতই আক্রান্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমির মধ্যে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর। জেলাগুলোতে ফসলের আংশিক ক্ষতির হার ৮ শতাংশ। আর বুলবুলে ৫০ হাজার ৫০৩ জন কৃষকের ২৬৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
দেশের ১৬টি জেলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হল- সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ফেনী, খুলনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল। জেলাগুলোতে বোরোর বীজতলা, রোপা আমন, শীতকালীন সবজি, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, খেসারি, ধনিয়া, মসুর, মাসকালাই, মুগ, পেঁয়াজ, রসুন, কুল, পেঁপে, কলা এবং পান জাতীয় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠি জেলায়।
আরও পড়ুন- পানির নিচে ফসল, ঋণের কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোলার কৃষকরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চন্ডী দাস কুণ্ডু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আক্রান্ত জমির রোপা ধান যদি পেকে থাকে তাহলে তা দ্রুত কেটে ফেলতে হবে। আর যদি আধা পাকা থাকে তাহলে ধানের কয়েকটি গোছা একসঙ্গে করে ঝুঁটির মতো করে বেঁধে দিতে হবে।’
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল সারাবাংলাকে জানান, তার এলাকায় ধানি ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৫০ ভাগ। জেলার কৃষক সুমন বলেন, ‘আর কয়েক দিন গেলেই ধান উঠে যেত। কিন্তু শেষ সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে পুরো ক্ষেত হেলে পড়েছে। এতে ফসলের উৎপাদন অনেক কমে যাবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১৫ ভাগ ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জমির পুরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কোনো কোনো জমির ফসল আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে ধানের বড় অংশটিই পরিপক্ক হয়ে উঠেছিল। পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো হিসাব আমরা দিতে পারব।’
প্রণোদনা বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান ফসল আমন। বুলবুলের কারণে রবি মৌসুমের প্রণোদনায় দক্ষিণাঞ্চলকে এবার প্রাধান্য দেওয়া হবে। নিয়মিত প্রোগ্রামের আওয়াতায় ওই এলাকায় ভুট্টা-মুগডালে অধিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্য ছিল।’
বুলবুলের প্রভাবে যেসব এলাকা বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেই অঞ্চলকে এখন আরও বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন- ‘বুলবুলে’ ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকার ১৫ ভাগ ফসলি জমি