Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লক্ষ্য ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আনা, কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে শিগগিরই


১২ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:০৫

ঢাকা: বাজারকে একক বা গোষ্ঠীগত নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। তবে এই সংস্থার জনবল সংকট যেমন রয়েছে, তেমনি এর ‘পুরো বিধিমালা’ও এখনো তৈরি হয়নি। যে কারণে এখনো দৃশ্যমান নয় প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যক্রম। অনেকেই সরকারের এই সংস্থা সম্পর্কে খুব একটা জানেনও না। তবে সম্প্রতি সাবেক বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলামকে এর চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় আলোচনায় উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

নতুন দায়িত্ব নেওয়া চেয়ারপারসন নিজেও সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানালেন, ব্যবসার প্রতিযোগিতা বিনষ্ট করে একচেটিয়া ক্ষমতার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে প্রতিযোগিতা কমিশন। নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা থাকলেও শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটির দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা যাবে।

জানা যায়, তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়। মূল লক্ষ্য— দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করে তা বজায় রাখা। কমিশনের দ্বিতীয় লক্ষ্য বাজারে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি (একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ) ও ওলিগপলি (সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ রাখা) কিংবা কর্তৃত্বময় অবস্থানের অপব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা। আর এ ধরনের একচেটিয়া বা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে সে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা বা নির্মূল করাই হলো কমিশনের তৃতীয় লক্ষ্য।

কমিশনের ক্ষমতার বিষয়ে প্রতিযোগিতা আইনে বলা হয়েছে, কোড অব সিভিল প্রডিউসর-১৯০৮ (১৯০৮ সালের ৫ নম্বর আইন)-এর অধীনে একটি দেওয়ানি আদালত যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, প্রতিযোগিতা কমিশনও একই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। তবে বাস্তবে এ আইনের প্রয়োগ তো দূরের কথা, দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রমেই তেমনভাবে দেখা যায়নি প্রতিযোগিতা কমিশনকে। শুধু তাই নয়, এই কমিশন ও কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কেও জানা নেই অনেকেরই।

সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলা, অর্থাৎ পণ্য বা সেবা— যেটাই হোক, উৎপাদন সরবরাহ বা বাজার ব্যবস্থাপনা কোনো ধরনের সুষ্ঠু পরিবেশকে নষ্ট করলে তা প্রতিরোধই প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ। একচেটিয়া ব্যবসা, যোগসাজশে ব্যবসা, মার্জার বা অ্যাকুইজিয়েশন, জোটবদ্ধ বা বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে— এমন পরিবেশ তৈরি হলে তা আমরা প্রতিরোধ করব। দেশে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন তৈরি হয় এবং ২০১৬ সালে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ শুরু করে। দুয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশন ব্যবস্থাও নিয়েছে। তবে এখনো জনবল বা অবকাঠামোর সুবিধা বা বিধিবিধানের অভাবে এর কাজ পুরো করা যাচ্ছে না। প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ দৃশ্যমানও হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ১৩০টি দেশে বিভিন্ন নামে প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে। এককথায়, এ ধরনের কমিশন মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২ শতাংশ অবদান রাখতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারলে প্রতিযোগিতামূলক দামে বা ন্যায্য মূল্যে ভোক্তারা পণ্য বা সেবা পাবেন। ব্যবসায় সুষ্ঠু পরিবেশ এলে বিনিয়োগ বাড়বে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। পণ্য ও সেবার গুণগত মান বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে অবদান বাড়বে। দরপত্র ও পাবলিক প্রকিউরমেন্টেও উন্নত পরিবেশ তৈরি হবে। সরকার ন্যায্য মূল্যে সেবা কিনতে পারবে। মার্জার ও অ্যাকুইজিয়েশনে কাজ করতে পারলে আর্থিক খাতেও সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো লার্নিং স্টেজে আছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনের বেস্ট প্র্যাকটিস থেকে আমরা অভিজ্ঞতা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কোথাও যদি একচেটিয়া ব্যবসা, অর্থাৎ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট হয়, তাহলে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারব। অভিযোগ দিলে বা নিজেরাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও অ্যাকশনে যেতে পারব। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদেরও সচেতনতা দরকার।

প্রতিযোগিতা কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে চেয়ারপারসন বলেন, ‘যেখানে কাজ আছে সেখানে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত বা সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে না। যেহেতু নতুন দায়িত্ব পেয়েছি, সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লাগবে। কোথায় কাজ করার সুযোগ আছে, তা শিখছি। কাজের অনেক সুযোগ আছে। কাজে হাত না দিলে চ্যালেঞ্জ কোথায় তা বলা যাচ্ছে না। তবে ছোট-খাটো যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ মনে করছি না।’

প্রতিযোগিতা কমিশনের নামে বাণিজ্য বা ট্রেড শব্দটি যুক্ত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিযোগিতা কমিশনের নতুন চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। অনেকেই প্রতিযোগিতা কমিশনের কাজ সম্পর্কে জানেন না। উচ্চ পর্যায়ের অনেকেরও এ কমিশনের কাজ সম্পর্কে জানা নেই। শুরুতে এর নামের সঙ্গে ট্রেড বা বাণিজ্য শব্দটি যুক্ত করার দাবি তুলেছিলেন অনেকে। তখন বলা হয়েছিল, অনেক দেশেই প্রতিযোগিতা কমিশন নামেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কর্মরত। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন, ব্যবসায়ীরা ঠিকই জানবেন যে এটি ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আনতে গঠন করা হচ্ছে। তারপরও আমরা নাম নিয়ে ভাবছি। প্রতিষ্ঠানটির নাম ট্রেড কম্পিটিশন অব বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশ ট্রেড কম্পিটিশন করা যায় কি না, তা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিধিমালা তৈরি হয়েছে কি না— জানতে চাইলে মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিধিমালা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। দুয়েকটি ক্ষেত্রে এখনো বিধিমালা তৈরি হয়নি। প্রতিটি খাতের বিধি তৈরি শেষে সমন্বতি বিধিমালা নামে তা কার্যকর হবে।’

জানা গেছে, ৭৩টি পদ থাকলেও কমিশন বর্তমানে চলছে ৩২ জন নিয়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ১৯ জন আউটসোর্সিং, তিন জন ডেইলি বেসিস ও ১০ জন ডেপুটেশনে রয়েছেন। বিভিন্ন গ্রেডে ৩৪ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। লিখিত পরীক্ষা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। শিগগিরই মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চেয়ারপারসন জানালেন, ‘আইন অনুযায়ী চার জন সদস্য ও একজন চেয়ারপার্সন নিয়ে কমিশন গঠিত। কিন্তু বর্তমানে সদস্য আছেন একজন। ফলে কমিশন গঠন করা যাচ্ছে না। শিগগিরই আরও সদস্য যুক্ত হলে কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।’

চেয়ারম্যান প্রতিযোগিতা কমিশন বাণিজ্য ব্যবসায় সদস্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর