যে ২ কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা
১২ নভেম্বর ২০১৯ ১০:০২
ঢাকা: সিলেট থেকে ছেড়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল উদয়ন এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে ঢাকার দিকে আসছিল তূর্ণা নিশীথা। এমন অবস্থায় রাতের শেষ ভাগে মন্দবাগ স্টেশনের কাছে উদয়নকে ধাক্কা দেয় তূর্ণা নিশীথা। ট্রেনের লাইন পরিবর্তনের সময়টাতেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ৬টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠে যায়। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায়ই তূর্ণা নিশীথা এসে ধাক্কা দেয়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবেই। এর পেছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ঘুমিয়ে সিগন্যাল দেখেননি। অথবা তাকে সিগনাল দেওয়া হয়নি বা পরে দেওয়া হয়েছে। এই দু’টি সামান্য ভুলের কোনো একটির কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তবে মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, আউটার ও হোম সিগন্যালে লাল বাতি (সর্তক সংকেত) দেওয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়াতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি করছেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে। ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীই তখন ঘুমিয়েছিলেন। যে কারণে বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ১৫ জন নিহতের তথ্য জানা গেছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই আট জনের মৃত্যু হয়। পরে বিভিন্ন হাসপাতালে আরও সাত জন মারা যায়।’
স্টেশন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সংকেত) অমান্য করেন অথবা তাকে সিগন্যাল দেওয়া হয়নি। মন্দবাগ রেল স্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য এই সিগন্যাল দেওয়ার কথা। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যেতে শুরু করে। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে পেরেছিল। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে। এতে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি ওই ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এতে উদয়নের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রেল মন্ত্রণালযয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন। সকাল পৌনে দশটায় ঘটনাস্থল থেকে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের আগে ঠিক কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এমন মন্তব্যে গেলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’
এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও।
এদিকে দু’টি রিলিফ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। সকাল সাড়ে নয়টায়ও উদ্ধার তৎপরতা চলছিলো। তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচগুলো সরিয়ে লাইন সচল রাখতে দু’টি এস্কেবেটর কাজ করছে।
তূর্ণা-উদয়ন মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেলো ১৫ জনের
দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে বেলা এগারোটার পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে পারে বলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।
ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জুয়েল বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ায় ঢাকা আসতে পারেনি। ট্রেনটি বিকল্প ইঞ্জিনে করে ঢাকা এলে সেই ট্রেন মহানগর প্রভাতী হয়ে আবার চট্টগ্রাম যাবে।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাত পৌনে ৪টায় কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের সাথে সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।