Sunday 29 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামের সেই আওয়ামী লীগ নেতা ফের কারাগারে


১২ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের পর ‘বিতর্কিত’ আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে কারগারে পাঠানো হয়েছে। ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর হাইকোর্টের নির্দেশে দু’মাস আগে তিনি জামিনে বেরিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম ওসমান গণি এই আদেশ দিয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর দিদারুল আলম মাসুম জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ আদালত তার জামিন বাতিল করে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী মাসুম আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।’

বিজ্ঞাপন

মাসুমের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে জানান, দিদারুল আলম মাসুম হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিনে ছিলেন। কিন্তু বাদিপক্ষের আবেদনে গত সেপ্টেম্বরের শেষদিকে আপিল বিভাগে তার জামিন বাতিল হয়। নভেম্বরের ১৩ তারিখের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

দিদারুল আলম মাসুম নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মাসুম লালখান বাজারের চানমারি রোডের ইপিক কামারপার্ক নামে একটি ভবনের বাসিন্দা।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের উত্থানের সময় চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার মোড়ে দিদারুল আলমের অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আলোচনায় আসেন তিনি। লাইসেন্স বাতিল হওয়া দু’টি অস্ত্রের মধ্যে একটি ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব প্রতিরোধের জন্য দিদারুল আলম মাসুম নগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের কাছে প্রশংসিতও হয়েছিলেন।

তবে এরপর থেকে লালখান বাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের প্রতিপক্ষের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাত, কয়েকটি খুনের ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমে মাসুমের নাম উঠে আসে। একপর্যায়ে গণমাধ্যমে ‘বড় ভাইয়ের’ তকমাও পান মাসুম। সর্বশেষ সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ‘বিতর্কিত’ নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি।

২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর সকালে নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার নিজ বাসার সামনে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। ফেসবুকে লেখালেখির কারণে দিদারুল আলম মাসুমের নির্দেশে সুদীপ্তকে খুন করা হয়েছে বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছিলেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা।

গত (২০১৯ সাল) ১২ জুলাই মিজানুর রহমান নামে এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানায়, সুদীপ্ত খুনের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ‘বড় ভাই’ দিদারুল আলম মাসুম।

এরপর গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লালখান বাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক মাসুমের নামে বিশেষ বিবেচনায় বরাদ্দ থাকা দু’টি অস্ত্রের (শটগান/৫৪৪৪/ডবলমুরিং ও পিস্তল/৩৩/খুলশী) লাইসেন্স বাতিলের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে মাসুমকে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তাকে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া যুবলীগ নেতা রিপন ও মিজান এবং ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মোমিন ও মুজিব হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া মাসুমের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ আনেন কাউন্সিলর মানিক।

ওই আবেদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অস্ত্র দু’টির লাইসেন্স বাতিলপূর্বক জব্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ৩১ জুলাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্র দু’টি জব্দের বিষয়ে চিঠি দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারকে। সিএমপির বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার মো.আব্দুল ওয়ারিশ খান বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অস্ত্র দু’টি জব্দের নির্দেশ দেন।

গত ৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে দিদারুল আলম মাসুম নিজে খুলশী থানায় গিয়ে অস্ত্র দু’টি জমা দেন। অবশ্য এর আগে শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারে মাসুমের বাসায় অস্ত্র দু’টি জব্দের জন্য গিয়েছিল পুলিশ। তবে অস্ত্র না পেয়ে তারা বাসায় নোটিশ দিয়ে আসেন। এতে বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির সাথে সাথেই যেন অস্ত্রগুলো থানায় জমা দেওয়া হয়। অন্যথায় অবৈধ অস্ত্র হেফাজতে রাখার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অস্ত্র জমা দেওয়ার পরদিন ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাসুমকে ঢাকার বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউ’র ব্লু ওশান টাওয়ারের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম।

৫ আগস্ট মাসুমকে আদালতে হাজির করে সুদীপ্ত হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। আদালত দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৯ আগস্ট পিবিআই হেফাজতে নিয়ে মাসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান মাসুম।

অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা আওয়ামী লীগ দিদারুল আলম মাসুম হেফাজতে ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর