‘রাষ্ট্রদূত নিয়োগে অযাচিত হস্তক্ষেপের দাবি ঠিক না’
১২ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:২১
ঢাকা: বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো পদায়ন নীতিমালা নেই। যে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে মিশনে পদায়ন বা বদলির ক্ষেত্রে পক্ষপাত এবং ভেতর ও বাইরে থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এতে পররাষ্ট্র সার্ভিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা যারা রাষ্ট্রদূত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন অ্যাসোসিয়েশনের এই দাবি সম্পর্কে সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাদের এই বক্তব্য ঠিক না’।
আরও পড়ুন: যেসব রাষ্ট্রদূত বহুদিন বিদেশে, তাদের বদলি করছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আন্তর্জাতিক সংগঠন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর স্বাক্ষরিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী সারাবাংলা হাতে পেয়েছে।
কর্মকর্তাদের একাধিক দাবি-দাওয়াসহ ওই বৈঠকে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রদূত পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত ১০ থেকে ১২ বছর বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এতে পররাষ্ট্র সার্ভিসের মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তা যারা রাষ্ট্রদূত হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অবস্থা নিরসনে যারা বর্তমানে আট বছরের অধিক সময় ধরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন তাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। রাষ্ট্রদূতদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর (৬ বছর) সদর দফতরে ফিরিয়ে আনা গেলে সব অফিসার রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবেন। এতে মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীলতা আসবে।’
অ্যাসোসিয়েশনের ওই বৈঠকে কর্মকর্তারা মোট ১৩টি সিদ্ধান্ত নেন। যার মধ্যে রাষ্ট্রদূত পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা বা পক্ষপাত ও ভেতরে এবং বাইরে থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করাসহ সাতটি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এসব জানি না। কেন তাদের এই অভিযোগ? তারাতো একটা বিশেষ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। যেখানে বাইরের কোনো লোককে ঢুকতে দেওয়া হয় না। তারপরও তাদের অভিযোগ। তারা তাদের আইনে চলে। তারাতো বাইরের লোকরে মানুষ মনে করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বক্তব্যগুলো ঠিক না। যারা এর সাথে আছেন তারাও কিন্তু অ্যাডভানটেজ নিয়েছেন। এখন হয়তো তাদের অ্যাডভানটেজ কমছে; সেজন্য তারা এমন কথা বলছেন। যারা খুব মেরিটরিয়াস, দে শুড বি এনকারেজড। আর এম্বাসেডর হওয়ার যে ক্ষমতা সেটা পদায়নের কারণে হয় না। এম্বাসেডর হয় আউট অব চয়েজে।’
ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি বুঝেছি। জুনিয়র লেভেলের একজন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি এম্বাসেডর করেছি ভুটানে। এইজন্য ওনারা খুব অসন্তুষ্ট। বাট দ্যাট হি গট, বিকজ অব হিজ মেরিট। হি ইজ এ সাকসেসফুল সিপি (চিফ অব প্রটকল), এই কারণে। এইটা নিয়ে ওনাদের মাথাব্যাথ্যা। কিন্তু ওনারাতো তার মতো সার্ভিস দিতে পারেন না।’
এর আগে, আগস্টের প্রথম দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন যে, বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে নবীন কূটনীতিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্কার হচ্ছে। এই সংস্কার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। দেশের বাইরে যে সকল রাষ্ট্রদূত দীর্ঘদিন বা ১৪/১৫ বছর ধরে আছেন প্রথম ধাপে তাদের স্টেশন বদলি করা হবে।
এই সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে এম্বাসেডর হিসেবে রয়েছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের চেষ্টা চলছে। আপনি জানেন যে, এই মন্ত্রণালয়ের সবাই বেশ পাওয়ারফুল। প্রত্যেকেরই অনেক তদবিরবাজ আছেন। সুতরাং এটি সময় সাপেক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকদিন যারা বিদেশে আছেন তারা দেশ ভুলে গেছেন। আমি চাই, তারা দেশে ফিরে কন্ট্রিবিউট করুক। এটাই আমার প্রিন্সিপাল। আমি চাই যে, যাদের তিনবছর প্লাস হয়ে গেছে দে শুড বি চেঞ্জ। এগুলো আমি শুরু করেছি; কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য।
এ কে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ হস্তক্ষেপ