সংসদে বিরোধী দলীয় এমপিদের তোপের মুখে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী
১২ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:৩৮
সংসদ ভবন থেকে: বিদেশে কর্মরত নারী শ্রমিকদের ওপরে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না বলে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ও কাজী ফিরোজ রশীদের আক্রমণাত্বক প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মো. ইমরান আহমদ। বিকেলে স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়।
নারী শ্রমিকদের বিদেশ পাঠানোর দাবি জানিয়ে দুইজন সংসদ সদস্য বলেন, বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয় যে, নারীদের সম্ভ্রমহানীর জন্য তাদের বিদেশে পাঠাতে হবে।
জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘বিদেশে নারী শ্রমিকরা হয়রানির শিকার হন মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না, এটা সঠিক নয়। সংসদের বিরোধী দলীয় এমপিদের এ ইস্যুতে বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে অভিযোগ করার জন্য এ অভিযোগ এবং রাজনৈতিক মাঠে দেওয়া বক্তব্যের মতো।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশে নারী কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সির অনিয়মের কারণে ১৬০টি এজেন্সির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তিনটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সিদের কাউন্টার পার্ট রয়েছে সৌদিতে, সেখানকার দায়িত্বরতদের বিস্তারিত জানাতে হচ্ছে মন্ত্রণালয়কে।’
পনির উদ্দিন আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪-১৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে মধ্যপাচ্যের দেশে মহিলা কর্মী পাঠানো হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৪২ জন। এসব নারী কর্মীদের প্রতারণা, নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ মিশনগুলোর শ্রম উইং থেকে নিয়মিতভাবে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘চার ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিশ্বের ১৭৩টি দেশে কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে পেশাদারিত্ব শ্রমিক, দক্ষ, আধাদক্ষ ও স্বল্পদক্ষ।’
মো. হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, বিদেশে কর্মরত অবস্থায় কোনো কর্মী মারা গেলে সাধারণত নিয়োগকর্তার খরচে মৃতদেহ দেশে আনা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে সেসব কর্মীর মৃতদেহ দেশে আনা হয়। এমনকি অবৈধ কোনো নাগরিক বিদেশে মারা গেলে তার লাশ ও সরকার দেশে আনার ব্যবস্থা করে থাকে।
মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমেদ বলেন, ‘মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে যাওয়ার পর কেউ যেন অসাধুদের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে ইউরোপে না যায় সেজন্য এর কুফল ও ভবিষৎ পরিণতি সম্পর্কে কর্মীদের সচেতন করা হয়।’ এছাড়া অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিদেশে কর্মী পাঠানো ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০০৯-১৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে বিদেশে কর্মী পাঠানো হয়েছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার দুই জন। এর আগে ২০০২-০৬ সাল পর্যন্ত ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২২জন।’