রাঙ্গাঁর বক্তব্য ব্যক্তিগত, দলের নয়: সংসদে জাপা এমপি
১২ নভেম্বর ২০১৯ ২২:২৪
সংসদ ভবন থেকে: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদ নূর হোসেনসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁর কটূক্তিকে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, এ বক্তব্য কোনোভাবেই তাদের দলের বক্তব্য নয়। তবে মহাসচিবের এমন বক্তব্যে জাতীয় পার্টি মর্মাহত। তারা এর জন্য লজ্জিত।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির দুই সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও মুজিবুল হক চুন্নু এসব কথা বলেন। অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের মতো তারাও রাঙ্গাঁকে তুলোধুনো করেন। ফিরোজ রশিদ তো তার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন।
আরও পড়ুন- সংসদে রাঙ্গাঁকে তুলোধোনা
রাঙ্গাঁর কড়া সমালোচনা করে ফিরোজ রশিদ সংসদে বলেন, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। আমি যতদিন রাজনীতি করি, ওর (রাঙ্গাঁ) তো বয়সও অতদিন না। ও এই ধৃষ্ঠতা দেখায় কিভাবে? তার বক্তব্য আমি শুনেছি। এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য না। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গাঁর নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে। এই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত। আমরা দুঃখিত এবং অপমানিত অনুভব করছি।
তিনি বলেন, নূর হোসেন নব্বইয়ে গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারেন, সে সাহসী যুবকের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমরা কখনো তাকে নিয়ে এ ধরনের অপমানজনক কথা বলিনি।
আরও পড়ুন- মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন রাঙ্গাঁ!
জাতীয় পার্টির সিনিয়র এই সংসদ সদস্য বলেন, সে এই দুঃসাহস কিভাবে পেল? এই সংসদই তাকে লাই দিয়েছে। কী ধরনের লোককে এ ধরনের পদে বসানো হয় যাদের অতীত-বর্তমান কিছুই ছিল না? হঠাৎ তাকে মন্ত্রী বানানো হলো! একটার পর একটা প্রমোশন দেওয়া হলো! আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম। এগুলো আমরা দেইনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ও করছে যুবদল, কোথায় আন্দোলন করছে? কোথায় সংগ্রাম করছে? বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ধৃষ্টতা দেখানোর দুঃসাহস সে কোথায় পায়? বঙ্গবন্ধু জাতির জনক। এই বাঙলি জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যে দলই করি, যেখানেই থাকি— বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। যিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এক করেছিলেন, তাকে নিয়ে এসব কথা বলে কিভাবে! শুধু তাই না, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কথা বলেছে। সে গণতন্ত্রের ছবক দেয়। যে লেখাপড়া করে নাই, রাতারাতি কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনে নৈরাজ্য তৈরি করে হঠাৎ করে এখানে এসে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছে, সে এসে এ ধরনের ধৃষ্ঠতা দেখায়! আর তার জবাব দিতে আজ সংসদে দাঁড়াতে হয়!
তিনি আরও বলেন, নূর হোসেন সম্পর্কে যে কথা বলেছে, আমাদের দল এটাকে গ্রহণ করে না। আমরা চরম ঘৃণাভরে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি। তার এই ব্যক্তিগত বক্তব্যের দায় দল নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে রাঙ্গাঁর কটূক্তি প্রসঙ্গে ফিরোজ রশিদ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী সেদিন পরিচয় করে না দিতেন, আমার জন্য যদি ভোট না চাইতেন, আমি নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে আসতে পারতাম না। মানুষ এত অকৃতজ্ঞ হয় কিভাবে? রাঙ্গাঁ সাহেব মনে করছেন, উনি নিজের জোরে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তার পেছনে যদি আওয়ামী লীগ না থাকত, ও রংপুরে নামতেও পারত না। কার কত ভোট আছে, আমাদের জানা আছে।
জাতীয় পার্টির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে বলেন, মশিউর রহমান রাঙ্গাঁর বক্তব্য জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে সমর্থন করে না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বক্তব্য।
চুন্নু বলেন, শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নূর হোসেনের বাড়িতে গিয়েই দেখিয়েছিলেন। তার মা-বাবার কাছে এরশাদ সাহেব দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন, অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করেছিলেন। এটাই জাতীয় পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি। এর বাইরে কেউ কিছু বললে সেটা তার বক্তব্য। তবে দোষ-ত্রুটি থাকলেও জাতীয় পার্টি গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে, নির্বাচনে সহযোগিতা করেছে। এটা মনে রাখলে ভালো হয়।
জাতীয় পার্টি মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ মুজিবুল হক চুন্নু রাঙ্গাঁর কটূক্তি